এ এম সি (রোমেল ) ফ্রান্স থেকে: যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে মানব সমাজ প্রবেশ করেছে নতুন এক জগতে। এর নাম ভার্চুয়াল জগত । বর্তমান প্রজন্মের তরুন তরুনীরা ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে প্রবেশ করে প্রতিনিয়ত নিজেরা শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং এই দুর্বলতা হওয়ার মেইন কারণ হচ্ছে ভার্চুয়াল জগত তাদের চোখের ঘুম প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে! ভার্চুয়াল জগতে আমরা মানুষ থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। বিশ্বস্ততার জায়গা, আস্থার জায়গা, সম্পর্কের জায়গা এসব থেকে আমরা বহু দূরে !আমরা একটা ভার্চুয়াল জীবন আছি আছি ,আবার নেই নেই !
এরকম সম্পর্কের মধ্যে প্রতিদিন ধাবিত হচ্ছি…..বর্তমানে বিশ্বে যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাহলো তরুণ – তরুণীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে সময় ব্যয় করাকে বেশি পছন্দ করে। এর ফলে পারিবারিক আড্ডায় বসার প্রবণতা কমে গেছে। শুধু তাই নয় এই ভার্চুয়াল জগত মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে । যদি ও আমরা বলি সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিক বন্ধন তৈরি করে কিন্তু এই এই মিডিয়া আবার আমাদের অনেক দূরে সরিয়ে দিচ্ছে…..ভার্চুয়াল এই জগতে আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে জীবনটা স্তম্ভিত হয়ে আছে… এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেটের নেশার কারণে ঘুম থেকে উঠতেও একেকজনের গড়ে দেরি হয় প্রায় ৯০ মিনিট। চিকিৎসকদের মতে, এভাবে দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা চলতে থাকলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ এবং অ্যাংজাইটির সমস্যা। এর আগে ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কম বয়সী রোগী হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের ৯০ শতাংশই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারেন না। এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, ভার্চুয়াল জগত আমাদের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে প্রভাব ফেলছে। ভার্চুয়াল জগত আমাদের জন্য যেমন নানা সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করেছে ঠিক তেমনি বাড়িয়ে দিয়েছে বিপদের আশঙ্কা।
একটু অসতর্কতা ও অসচেতনতা বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।ভার্চুয়াল জগত হচ্ছে এমন এক জগত যেখানে মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটে কম্পিউটার, মোবাইল তথা যন্ত্রের সহযোগিতায়। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বা ভার্চুয়াল জগত পরিভাষাটি প্রথমবার ব্যবহার করেন উইলিয়াম গিবসন। তিনি হচ্ছেন সায়েন্স ফিকশনের বিখ্যাত লেখক। মানুষে-মানুষে যে যোগাযোগ ও লেনদেন তা বাস্তব জগতের বিপরীতে বিশ্বজনীন এবং এখানে একজন ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখতে পারে। এই জগতের নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা নেই। আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তা সম্পর্কে একটু চিন্তা করলেই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইল ও চ্যাটরুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে তৎপরতা চালান। ইন্টারঅ্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে ভার্চুয়ালজগতের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেখানে একইসঙ্গে পরস্পরকে দেখা যায়, কথা বলা যায়, লিখে বা না লিখে ভাব প্রকাশ করা যায়। রেডিও, টিভি ও পত্রপত্রিকার মতো গণমাধ্যমে যা এত ব্যাপকভাবে সম্ভব নয়।
বিশ্বায়নের যুগে এই জগতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। তথ্য ও যোগাযোগ সংক্রান্ত প্রযুক্তির সহযোগিতায় এসব ঘটনা ঘটছে। ভার্চুয়াল জগত মানুষের সামনে এমন সব দিগন্ত খুলে দিয়েছে যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো সম্ভব। ভার্চুয়াল জগতের নানা ইতিবাচক দিক থাকলেও এর বিপদের মাত্রাও কম নয়। এই জগতে তৎপর সব শ্রেণির মানুষেরই বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বাস্তব জগতের মতো ভার্চুয়াল জগতেও তৎপর রয়েছে নানা পর্যায়ের অপরাধী। যারা ভালো মানুষের ছদ্মবেশে প্রতিনিয়ত মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। কখনো হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। অনেক দুষ্টু স্বভাবের পুরুষ নারীর নাম ব্যবহার করে সরল মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ধোকা দিচ্ছে। একটা সময় ছিল ঘুম থেকে উঠে আমরা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বা বসে পত্রিকার পাতায় চোখ রাখতাম আর আজ ঘুম থেকে উঠে বিছানার মধ্যে বসে থেকে ফেসবুকের পাতায় চোখ।
আমি নিজেকে নিজে একটু ব্যতিক্রমভাবি এই ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করার পর থেকে…. প্যানাডেমিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিজেও গত তিন মাস ধরে আবদ্ধ ছিলাম ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করে শেষমেশ মেন্টাল ডীজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছিল কিন্তু একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে অনেকটা সচেষ্ট হয়েছি । আর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে চেষ্টা করছি তবে পারব কি না জানি না ,এই ভার্চুয়াল জগতের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ।
ভার্চুয়াল জগতের কারণে বাবা-মা এবং শিশুদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার ধরণটা এতটাই ভয়াবহ যে, ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে গিয়েও শিশু-কিশোররা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আনন্দের মুহূর্তগুলো সঠিকভাবে উপভোগ করার অনুভূতিই যেন মরে যাচ্ছে ভেতর থেকে। এ অবস্থায় বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত বর্তমান প্রজন্মের তরুন তরুনীর ও শিশুুদের ভার্চুয়াল জগতের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজ নিজ সন্তানদের দূরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো।