1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন

ঝুপড়ি কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হলেন সেই নারী স্বাস্থ্যকর্মী

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

নিউজ ডেস্ক: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে নির্জন পুকুর পাড়ের ঝুপড়ি ঘরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা এক নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে সাত দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তাদের ঘরের পাশে একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে তাকে রেখেছে। এছাড়া পুলিশ ওই ঝুপড়িঘরটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।

ওই স্বাস্থ্য কর্মী ঢাকার ইমপালস হাসপাতালের চিকিৎসকের এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে চাকরি করেন। করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। তাই গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ওই স্বাস্থ্য কর্মী কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করতে থাকেন। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর গোটা কোটালীপাড়া উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

ওই স্বাস্থ্য কর্মী জানান, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে তিনি চাকুরী করেন। করোনাভাইরান সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসাপাতাল বন্ধ করে তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভিতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী আরো বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জীবন যাপন করেছি। খুব কষ্ট হয়েছে। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিলনা। ৭ দিন পর আজ (সোমবার) পুলিশ আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।

ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছিলো। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েকে এখানে রেখেছিলো। আমি ওই আওয়ামীলীগ নেতার শাস্তি চাই।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তেই ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে সেখানে রাখা হয়েছে। আমি একা কোন সিদ্ধান্ত দেইনি। এখন অপরাধ হলে সবার হবে। এখানে আমার একার দায় নেই।

কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ঝুপড়ি ঘর থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাদের ঘরের পাশে নতুন একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে তাকে রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই ঝুপড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিকেলে আমি ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাকে আমরা কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তার কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর পাঠানো হবে। ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা অমানবিকভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভিতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys