নিউজ ডেস্ক: সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অপসারণ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন সিসিকের ২২ কাউন্সিলর। অনিয়মের অভিযোগ এনে সিসিকের ২৭ ওয়ার্ডের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট কাউন্সিলররা এ অভিযোগপত্রে সই করেছেন।
বুধবার (৪ মার্চ) বিকেল ৫ টায় সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে এ অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন তারা।
কাউন্সিলরদের পক্ষে সিসিকের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন স্বাক্ষরিত অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও মেয়রের একান্ত সচিব বরাবরে দেওয়া হয়েছে।
সিসিকের কাউন্সিলরদের সই করা অভিযোগপত্রের কপি এরইমধ্যে বাংলানিউজের হাতে এসে পৌছেছে।
লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন- সরকার যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেয়। তখনই লক্ষ্য করা গেছে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ সভায় উপস্থাপন ও আলোচনা না করে বর্তমান পরিষদকে উপেক্ষা করে পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই দক্ষিণ সুরমা এলাকার তেঁতলী ইউনিয়নের বানেশ্বরপুর মৌজায় জায়গা অধিগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন শাখায় লোক নিয়োগ করেছেন। তার ব্যক্তিগত বৃহৎ স্বার্থে সিটি করপোরেশনের স্বার্থ ক্ষুদ্র করে কাজে আসে না এমন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিল পাওয়ার ক্ষেত্রে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করেন, যা সিটি করপোরেশনের আইন ও বিধিমালার ধারা-১৩ এর উপধারা ১ (ঘ) অনুসারে মেয়র পদে থেকে অপসারণ যোগ্য অপরাধ। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষ মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
.
অভিযোগপত্রে সই করা কাউন্সিলররা হলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তারেক উদ্দিন তাজ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এ কে এম লায়েক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আজাদুর রহমান আজাদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তনু দত্ত শন্তু, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মুহিত জাবেদ, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ তৌহিদুল হাদী, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুরন রকিব তুহিন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়ফুল আমিন বাকের, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মখলিছুর রহমান কামরান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এসএম শওকত আমিন তৌহিদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইলিয়াছুর রহমান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রকিবুল ইসলাম ঝলক, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিকন্দর আলী, সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুদা সুলতানা, সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাজনীন আক্তার কনা, সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেবেকা আক্তার লাকি।
কাউন্সিলররা আরও জানান, গত দু’দিন আগে মেয়র অপসারণের বিষয়ে একমতে পৌঁছাতে তারা বেশ কয়েকবার বৈঠকে মিলিত হন। অনেকটা গোপনে বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যমতের পর এবার প্রকাশ্যে আসছেন তারা।
নামপ্রকাশে অনিচ্চুক অভিযোগকারী কাউন্সিলরদের অনেকে বলেন, আপাতত আমরা অভিযোগ দিচ্ছি। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়রের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় তুলে ধরবো।
কাউন্সিলররা বলেন, পরিষদকে না জানিয়ে তেঁতলী ইউনিয়নের বানেশ্বপুর মৌজায় ২৭ কেদার (৪১০ শতক) ২০ শতক ভূমি ২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা অধিগ্রহণ ব্যয় দেখিয়েছেন মেয়র। কিন্তু তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই টাকার ৩ ভাগের একভাগ টাকা দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ৫০ জনের স্থলে আড়াইশ পরিচ্ছন্ন কর্মীর বেতন তুলে আত্মসাৎ করেছেন।
এসব অভিযোগের বাইরেও মেয়র নিজের মেয়েকে সিসিকের একটি প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রেখেছেন মোটা অংকের বিনিময়ে। আর ডে লেবারদের এপিএস, পিএস করে বিদেশে পাঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
দুপুরে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতরে এ অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরও বিস্তর অভিযোগ আছে মেয়রের বিরুদ্ধে, যেগুলো তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন অভিযোগকারী কাউন্সিলররা।