হুসাইন মুহাম্মাদ: ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই। অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধের পরে, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্জন করে তার স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে, নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।
দেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস আজ (রোববার)। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে আজ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে জাতি।
১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার ৫ দশক পরে এসে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বর্তমান সরকার তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসের পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও সুষ্ঠুভাবে চলছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জিত হবে। বাংলাদেশ একটি উন্নত-ধনী-স্মার্ট দেশে পরিণত হবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, আমাদের ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি। আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু ও মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি। এছাড়া জাতির পিতার খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। আসুন বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলি। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, এটাই হোক স্বাধীনতা দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বন্দুকের স্যালুট ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হবে।
আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
সূর্যোদয়ের সময় সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব ভবন ও স্থাপনা আলোকিত করা হবে।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দিবসটি উদযাপন করবেন।
এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।