নিউজ ডেস্ক : উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সব নদ-নদীতে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার অন্তত ১১ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নগরীর অর্ধশত এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন নগরবাসী।
তলিয়ে গেছে ফসলী জমি, ফিশারি, বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি বন্দি হয়ে কয়েক লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারতে প্রবল বৃষ্টির ফলে সিলেটে সবগুলো নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। সিলেটেও নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সিলেটে ৭২, কানাইঘাটে ৭০, শেওলায় ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে, সুরমা, কুশিয়ারা, সারী নদী, পিয়াইনসহ অন্যান্য নদ-নদীতে পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার। বর্তমানে এই পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার। বর্তমানে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বিপদসীমা ছাড়িয়ে বর্তমানে ১৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেওলা পয়েন্টে বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে বিপদ সীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সারি, লোভা, পিয়াইনসহ ছোটো ছোটো নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাসস’কে জানিয়েছেন, সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। উজানের ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মহানগরীর বিভিন্ন এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ শুরু করে। আতঙ্কে মানুষের রাত কেটেছে নির্ঘুম। নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, পাইকারি বাজারখ্যাত কালীঘাট, চাঁদনীঘাট, ছড়ারপাড়, তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রোজভিউ থেকে উপশহরের মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বহু মানুষের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নগর ছাড়াও সিলেটে অন্তত ১১টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ায় এরই মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ^নাথ, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটে উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া চাল সিলেটের ৯ উপজেলায় বণ্টন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাসস