নিউজ ডেস্ক: পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার তথা বার্মিজ আচার, কাপড়, চাসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। নাফ নদী পেরিয়ে কক্সবাজার হয়ে আচার ও চায়ের চালানের আড়ালে ভয়াবহ মাদক আইসের চালান নিয়ে আসছে একটি চক্র।
এরপর সেসব আইস রাজধানীসহ চাহিদামতো সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। র্যাব বলছে, দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।
দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইসসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দকৃত আইসের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এছাড়া তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেফতাররা টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে আসেন। চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে গত কয়েক মাস ধরে আইস নিয়ে আসছিল। রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেফতার এ আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে।
গ্রেফতার খোকন আইসের অন্যতম হোতা বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের ব্যবসা ছিল। সে এ ব্যবসার আড়ালে ভয়ঙ্কর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী রফিক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফে অটোরিকশা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহন ও স্থানান্তর করতেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মানব দেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে এ আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি-লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে।