শোনা যায়, যেকোনো ছবিতেই পোশাক নির্বাচনের ব্যাপারটা সালমান শাহর ওপর ছেড়ে দিতেন পরিচালক। ফরমাল পোশাক পরবেন, নাকি ক্যাজুয়াল, সিদ্ধান্ত সালমানই নিতেন। এমনও হয়েছে, পরদিন শুটিং, আগের দিন সারা বিকেল-সন্ধ্যা সালমানের কেটেছে নিউমার্কেটের দোতলায়। নিজে কাপড় কিনে, টেইলার্সে বসে নিজেই দেখিয়ে দিচ্ছেন ডিজাইন। এ-দোকান, সে-দোকান ঘুরে নিজেই জামা কিনছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আউটডোরে গেলে কিংবা শুটিংয়ের জন্য দেশের বাইরে গেলে ফিরে আসার সময় তাঁর সঙ্গে থাকত নানা ধরনের পোশাক-আশাক ভর্তি ছয় থেকে সাতটি লাগেজ। এসব তথ্য একাধিক পরিচালকের কাছে পাওয়া।
যুগে যুগে তরুণদের ফ্যাশন আইকন সালমান। ব্যাকব্রাশ চুল, কানের দুল, রংবেরঙের টুপি, সানগ্লাস, ফেড জিনস, মাথায় স্কার্ফ—কত স্টাইল। লাল কিংবা কালো নকশায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত স্কার্ফ (হাজি রুমাল) বাংলাদেশে সালমানই ফ্যাশনেবল করেছেন। মাথায় গামছা বেঁধেছেন।
কণ্ঠশিল্পী আগুনের গাওয়া অনেক গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন সালমান। এক স্মৃতিচারণায় আগুন বলেন, ‘দারুণ স্মার্ট ছেলে ছিল সালমান। ওর বিহেভ, ইংরেজি বলা সবার থেকে আলাদা। ব্র্যান্ডের জিনিস ছাড়া পরত না। আবার বানানো জিনিস পরলেও দারুণ মানিয়ে যেত। সমসাময়িক অনেক নায়ক ছিল, অনেক চেনা মুখ ছিল। কিন্তু এফডিসিতে গেলে সালমানকে আলাদা করা যেত।’
কখনো শার্টের কলার উঠিয়ে কিংবা হাফহাতা গেঞ্জি, জিনস ওপরের দিকে ভাঁজ, হুডি–শার্ট কখনো ইন করে আবার ওপেনে রেখে বিচিত্র লুক, কাউবয় বা জমিদারি পোশাকে, শেরওয়ানি, পাগড়ি, পাঞ্জাবি পরে পর্দায় হাজির হতে দেখা গেছে সালমানকে।
পলো–শার্টের হাতা ভাঁজ করে পরা সালমান শিখিয়েছেন। ফেড জিনস পরে হাঁটুতে রুমাল বেঁধেছেন সালমান। পশ্চিমা পোশাকে তাঁকে যেমন মানিয়ে যেত, তেমনি আটপৌরে জামায় বেশ লাগত। আর এসব নিজ উদ্যোগেই নিতেন বা ব্যবহার করতেন।
র্যাম্প মডেল ছিলেন সালমান। গানও গাইতেন কালেভদ্রে। তারপর একদিন বড় পর্দায় তাঁর আবির্ভাব। সে গল্পটা অনেকবার বলেছিলেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। নায়িকা হিসেবে মৌসুমী নির্বাচিত হলেন। নায়ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে সময় আমিন খান, তৌকীরসহ অনেককেই দেখেছেন। একদিন সালমানের ছবি দেখে পছন্দ হয়। কিন্তু যখন শুনলেন অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমান ছেলেটি, তখন আর রাজি হলেন না সোহানুর রহমান। একদিন ধানমন্ডিতে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় এক তরুণকে ডেকেছেন। কিন্তু মনে ধরল না। হঠাৎ কী মনে এল, চায়নিজের রিসেপশন থেকে সালমানকে (ইমনকে) ফোন দিলেন। ২০ মিনিটে মোটরবাইক নিয়ে সেখানে হাজির সালমান। সেদিন দ্রুত এলেন, দেখলেন, জয় করে চলেও গেলেন সালমান।