নিউজ ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নাগরিক অধিকার থেকে সরকার বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আগের দিন অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত গতকাল জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এই সভা মনে করে, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ শালীনতা বিবর্জিত। তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সভা। সভা মনে করে, ‘শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংবিধানিক এবং প্রচলিত আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনপ্রিয় এই নেত্রীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাকে তার প্রাপ্য জামিনও দেওয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের মামলায় প্রায় অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে। খুনের মামলা,
সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসি অথবা আজীবন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মুক্তি নিয়ে বিদেশে গেছে। আর খালেদা জিয়া তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার বাসভবনে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা প্রশাসনিক নির্দেশ। আইনের কোথাও বলা নেই সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবে না। এটি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
গত শনিবার জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত বলে মনে করে বিএনপির এই সভা। সভা মনে করে, সংসদ নেতা তার মন গড়া কল্প কাহিুন র মধ্যে দিয়ে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী এবং জনগণের আস্থাভাজন প্রিয় নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন বলে করে বিএনপি। এই বক্তব্যেরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে সংসদ নেতা ও আইনমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য খারাপ নজির স্থাপন করছে। এই নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করবে বলে আশা করে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগ করা উচিত
সভায় করোনার ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ভয়াবহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই জন্য সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতিকে দায়ী করে। একদিকে চিকিৎসাব্যবস্থায় ব্যাপক নৈরাজ্য ও দুর্নীতি, অন্যদিকে করোনা টিকার দুষ্প্রাপ্যতা কোটি কোটি মানুষের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই ব্যর্থতায় সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
দরিদ্রদের জন্য এককালীন পনেরো হাজার
সভা মনে করে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন, সাধারণ ছুটি, সীমিত লকডাউন, কঠোর লকডাউনের ফলে প্রায় দুই কোটির ওপরে মানুষ দরিদ্র হয়েছে। লাখ লাখ শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ৮৫ শতাংশ, সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি কর্মহীন। অবিলম্বে, এ সব নাগরিকদের এককালীন ১৫ হাজার টাকা প্রদানের আহ্বান জানায় সভা।
মাববাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ : সম্প্রতি আইন ও সালিশকেন্দ্র ‘আসক’র প্রকাশিত প্রতিবেদন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটসওয়াচ প্রমুখ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভা মনে করে, ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, সাংবাদিক নির্যাতন এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপব্যবহারে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র মধ্য যুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এই জবাবদিহিহীন অনির্বাচিত সরকারের একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারাদেশে যে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, তার ফলই হচ্ছে এই ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতি। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যথাযথভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
সভায় বন্যাদুর্গত অঞ্চলে অবিলম্বে সরকারি ত্রাণ বিতরণ এবং বীজতলা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নতুন বীজ সরবরাহের দাবি জানায়। দলের নেতাকর্মীদের যথাসম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। সভায় অংশ নেন মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^রচন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।