নিউজ ডেস্ক: ঢাকার গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত কলেজছাত্রী মুশরাত জাহান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বলেছেন, ‘গত কিছুদিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ ছিল। সে বিয়ের কথা আনভীরকে বলেছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।’ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফিরে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী ভবনের ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবছর আগে থেকে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের পর তাদের মধ্যে অনেক কিছুই হয়েছে।’
নুসরাত জাহান দাবি করেন, ‘‘গত কিছু দিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ। সে বিয়ের কথা আনভীরকে বলেছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে। কালকে মুনিয়া ফোন করে বলে, ‘আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে ধোঁকা দিয়েছে, ধোঁকা দিয়েছে। আপু তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো, আমার অনেক বড় বিপদ। আমার যেকোনও সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’। বিষয়টি জেনে ঢাকায় রওনা দেই এবং যেতে যেতে তাকে অনেক ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু সে আর ফোন ধরেনি। পরে বাসায় গিয়ে দরজা নক করলেও সে খুলেনি। এ সময় বাসার মালিককে ডেকে ঘরের তালা ভেঙে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। আনভীর ওই বাসায় আসা-যাওয়া করেছে, সিসিটিভির এমন ফুটেজ পুলিশ পেয়েছে।’’
এর আগে মঙ্গলবার বাদ আসর কুমিল্লা নগরীর টমসমব্রিজ কবরস্থানে মুনিয়ার দাফন সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় উৎসুক মানুষ বাসাটির আশপাশে ভিড় জমায়।
এসময় মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বোন মুনিয়া সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমরা মনে করছি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জানা যায়, নগরীর মনোহরপুরের উজির দীঘির দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগে সে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নামক একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে সে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার মডার্ন হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার কনিষ্ঠ।
জানা যায়, গুলশান দুই নম্বর এভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাটে একা থাকতেন কলেজছাত্রী মুনিয়া। চলতি বছরের মার্চ মাসে এক লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় তিনি ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।