নিউজ ডেস্ক: করোনা ঝুঁকির মধ্যেও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল থামছে না। ঢাকা ও বিভিন্ন পোশাকশিল্প এলাকাগুলোয় হাজার হাজার শ্রমিক গতকালও ফিরেছেন।
এছাড়া স্থলপথে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে আসছেন শ্রমিকরা। এতে করে দ্রুত নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকার কর্মস্থলে যেতে শিমুলিয়াঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম। আর গণপরিবহনের অভাবে এসব পোশাক শ্রমিক পিকআপ ভ্যান এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ফিরেছেন। পরিশোধ করেছেন সাধারণ ভাড়ার দুই থেকে তিন গুণ অর্থ।
সারাদেশের ৭ হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানার মধ্যে বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে ২ হাজার ৩৫৬টি। শিল্প পুলিশ জানায়, এরমধ্যে ঢাকার ৪৪৩টি, গাজীপুরের ৬৩৮টি, চট্টগ্রামের ৬০৫টি, নারায়ণগঞ্জের ৩০১টি, ময়মনসিংহের ৮০টি এবং খুলনার ২৮৯টি কারখানা রয়েছে।
গত ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, সীমিত আকারে চালু হতে যাওয়া পোশাক কারখানাগুলো শহরে অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়েই চলবে। বাইরে থেকে রাজধানীতে শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণার একদিন পরেই শ্রমিকরা এভাবে আসতে শুরু করে। যাতে করে তারা তাদের কারখানায় কাজে অংশ নিতে পারে। তবে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শ্রমিকদের এভাবে ঢাকায় ফিরতে দেখে তিনিও উদ্বিগ্ন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেন শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছে আমি জানি না। গত মঙ্গলবার গার্মেন্টস মালিকরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তারা ঢাকার বাইরে থাকা কোনো শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে বলবেন না। আমরা মালিকদের কাছে জানতে চাইব কেন এবং কীভাবে শ্রমিকরা ঢাকায় আসছেন।
তিনি আরো বলেন, এত বিরাটসংখ্যক মানুষকে ঢাকায় প্রবেশ করতে না দেওয়া কার্যত অসম্ভব। তিনি বলেন, শ্রমিকরা হয়তো ভাবছেন কাজে যোগ না দিতে পারলে তারা চাকরি হারাবেন। এ কারণেই তারা ঢাকায় ফিরে আসছেন। অপরদিকে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক গণমাধ্যমকে মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকদের ফেরার দরকার নেই এবং এপ্রিল মাসের বেতন তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের বলেছি যে, শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যাবে না।
মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, একটানা চার দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ফেরি ও ট্রলারে করে শত শত মানুষ পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসছেন মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। করোনা ঝুঁকির মধ্যে ফেরি ও ট্রলারে গাদাগাদি করে ঢাকামুখী এসব মানুষ ছুটে আসছেন। এদের বেশির ভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গার্মেন্টসের কর্মী।
কাঁঠালবাড়ী ঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক শামসুল আবেদীন বলেন, আজ (গতকাল) ভিড় ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। তিনি বলেন, তবে পুলিশ সদস্যরা সেখানে থাকলেও এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আটকানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।