নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে অবৈধ বিট কয়েন বা ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ চারজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-হামিম প্রিন্স খাঁন (৩২), রাহুল সরকার (২১), সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস (২৮) ও মো. সোহেল খান (২০)।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গতকাল শনিবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর দারুস সালাম থানার মাজার রোডস্থ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বিট কয়েন বা ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ চারজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় দুটি ল্যাপটপ, দুটি ডেভিট কার্ডও জব্দ করা হয়েছে।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ভার্চুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটের সাইট হতে একাউন্ট করে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন ক্রয়/বিক্রয় করে থাকে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশি বেশ কিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার/ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করে। এছাড়া, গ্রেপ্তারকৃতরা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে। তারা পর্নোগ্রাফিগুলো অর্থের বিনিময়ে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচারণা চালায়। এমন প্রচারণার মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করে থাকে। আগ্রহীদের তারা অর্থের বিনিময়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এছাড়া তারা বেশ কিছু আগ্রহীদেরকে প্রলুব্ধ করেছে। তারা তাদের কাছ থেকে নেওয়া কোটি কোটি- টাকা বিনিয়োগ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত যেখানে বিট কয়েন ব্যবসায় আগ্রহীরা যুক্ত রয়েছে। গ্রুপে কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি মাসে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা লেনদেন করে বলে জানা যায়। এ চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তারকৃত হামিম প্রিন্স খাঁন এবং বাকিরা তার সহযোগী।
যেভাবে যুক্ত হলেন হ্যাকিং ও বিট কয়েন ক্রয়-বিক্রয়ের জগতে
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত হামিম প্রিন্স খাঁন ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) পাশ করে। পরবর্তীতে তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে কম্পিউটারের ওপর পারদর্শীতা লাভ করেন। তিনি ২০১৩ একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ক্রিপ্টো কারেন্সির ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রায় ৫০ এর বেশি মানুষকে বিট কয়েন লেনদেন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
বিট কয়েন ছাড়াও তিনি লিটকয়েন, ডগকয়েন, ইথারিয়াম, ব্রাস্ট, ন্যনো ইত্যাদি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিট কয়েন কিনে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। ভার্চুয়াল জগতে তার ১৫/১৬টি ওয়ালেট রয়েছে।
অপরদিকে, গ্রেপ্তারকৃত রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার হামিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হামিমের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে তিনি বিট কয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হয়। তার বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।
এছাড়া, গ্রেপ্তারকৃত সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিদপুরের স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকেই হামিম তাকে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন লেনদেনে উদ্ধুদ্ধ করে। সে হামিমের কথায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে নিজের নামে বিটকয়েনের একাউন্ট খুলে অর্থ লেনদেন করে আসছিল।
গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহেল খান সম্পর্কে র্যাব জানায়, মূলত সে অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করত। পরবর্তীতে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে চটকাদার বিজ্ঞাপনে লোভে পরে হামিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বিটকয়েনে নিজের নামে ওয়ালেট খুলে এই অবৈধ লেনদেন করে আসছিল। অনলাইনে তার বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।