নিউজ ডেস্ক: ভীষণ কষ্টে আছি। এবারের লকডাউনে কেউ কোনো সাহায্য করেনি। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কত যে কষ্টে আছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন খুলনার মৌলভীপাড়া এলাকার রিকশাচালক শাহ আলম।
শাহ আলমের মতো একই সুরে খানজাহান আলী রোডের বাসিন্দা সুভাষ বসু বলেন, লকডাউনের কারণে দিনমজুর যারা তারা এখন গৃহবন্দি। সবকিছুই বন্ধ। যে কারণে কোনো আয় নেই।
মুজগুন্নী এলাকার হতদরিদ্র কুলসুম বেগম জানান, এবার লকডাউনে তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। কেবল বৃহস্পতিবার খুলনা ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ পেয়েছেন।
মাথাভাঙ্গা এলাকার ইজিবাইক চালক আনোয়ারুল ইসলাম খোকন বলেন, ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে রোজা রাখতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিদিন আয় প্রতিদিন ব্যয়। তা বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট করে রোজা রাখতে হচ্ছে। গত বছর লকডাউনের সময় অনেকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এবার কেউ কোনো সাহায্য করেনি। আমাদের বসিয়ে রেখেছে কিন্তু কোনো সহযোগিতা করছে না।
তিনি জানান, তার মতো ২০ হাজার ইজিবাইক চালক এবারের লকডাউনে কষ্টে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান কঠোর লকডাউনে রিকশাচালক, গাড়িচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, দোকানদার, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী এমনকী খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা এখন ঘরবন্দি। তাদের জীবন চলছে ভীষণ কষ্টে। অনেকেই খাদ্য সঙ্কটে আছেন।
দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। গতবছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করলেও এবার তাদের কেউ সহযোগিতা করছে না অভিযোগ উঠেছে।
চলমান এই লকডাউনে শিল্পঞ্চল খ্যাত খালিশপুর দৌলতপুরের কর্মহীন শ্রমিকের মলিন মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কাই বেশি। তারা অনেকেই শহর ছাড়ার চিন্তা করছেন।
এ লকডাউনে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় কষ্ট। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষ এই করোনা সংকট মোকাবিলায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান তারা।
এদিকে চলমান লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বিপাকে। করোনার মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন কমেছে, সে সময় নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। এতে ভোক্তাদের কষ্টও বেড়েছে। প্রতিনিয়ত চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
খুলনা ব্লাড ব্যাংক ও ফুড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় সরকারিভাবে কোনো প্রকার ত্রাণ বিতরণ এখনও আমার চোখে পড়েনি। চাল-ডাল কেউ বিতরণ করেনি। আমাদের মতো কিছু বেসরকারি সংগঠন সামান্য সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, খুলনা ব্লাড ব্যাংক সাধ্য অনুযায়ী এবারও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ১৫০টি পরিবারে মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে যা চলতে থাকবে। অনুদান যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ তা বিতরণ করা হবে।
গত বছরের মতো এবারও সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে করোনা সংকট মোকাবিলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান সবুজ।
তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ২৪ডটকম