নিউজ ডেস্ক: ব্রেক্সিট-পরবর্তী নীতি কী হবে-ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেল। শুরু হচ্ছে নতুন পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসননীতি। ইউরোপের জন্যও বন্ধ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের দুয়ার। অবাধ যাতায়াত ও কাজের সুযোগ সীমিত করে দিয়ে সবার জন্য একই নিয়ম চালু হচ্ছে। নতুন নিয়মে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে একজন কর্মীকে কমপক্ষে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন অভিবাসননীতি কার্যকর করতে যাচ্ছে ব্রিটেন।
সেই ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদেরও ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে হবে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নতুন এই অভিবাসন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া এ নিয়ম ইইউ এবং ইইউবহির্ভূত সব দেশের নাগরিকদের জন্য সমানভাবে কার্যকর হবে। নতুন নিয়ম ইইউবহির্ভূত দেশের নাগরিকদের জন্য বরং কিছুটা শিথিল।
তবে নতুন আইনে, বিদেশি অপরাধীরা, যারা ১২ মাস কারাগারে ছিল এবং যাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা রয়েছে তাদের জন্য ব্রিটেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। একই সঙ্গে ব্রিটেনে যদি কোনো অভিবাসী এক বছরের বেশি দণ্ডিত হন, তাকেও নতুন অভিবাসনবিধি মোতাবেক দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পয়েন্টভিত্তিক নিয়মে অনুমোদিত চাকরিদাতা স্পন্সর কাজের অফার দিলে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে। আর বাকি ২০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে যদি চাকরিপ্রার্থীর ইঞ্জিনিয়ারিং বা তথ্য-প্রযুক্তির মতো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রযুক্তি, প্রকৌশলী, গণিতবিদদের ক্ষেত্রেও নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ২০ পয়েন্ট অর্জনের পাশাপাশি বার্ষিক বেতন ২৫৬০০ পাউন্ড হতে হবে। ইংরেজি জানা ও না জানা কর্মীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন কম বা বেশি হওয়ার পাশাপাশি পয়েন্টও কমবেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নিয়মে বেশির ভাগ কর্মীকেই সর্বনিম্ন বছরে ২৩,০৪০ পাউন্ড বেতন হতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন ল্যাব টেকনিশিয়ানদের বছরে ২০,৪৮০ পাউন্ড বেতন হলেও চলবে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা শেষে দুই বছর অতিরিক্ত (পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক) যুক্তরাজ্যে অবস্থান এবং কাজের সুযোগ পাবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, ইউরোপ থেকে বের হয়ে আসার জন্যই জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। যাতে করে বোর্ডার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। এখন আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে চলে এসেছি, আমরা এই দেশের পূর্ণ সম্ভাবনা প্রকাশ করতে এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো কার্যকর করতে নতুন নিয়ম চালু করতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ব্রিটেন ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত, সেরা এবং উজ্জ্বল বিশ্ব প্রতিভাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে যুক্তরাজ্যের মধ্যে থেকে কর্মীদের নিয়োগদানে নিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন অভিবাসনব্যবস্থা বিশ্বের সেরা এবং প্রতিভাবানদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।’ তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, কেয়ার ওয়ার্কারদের এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফাস্ট ট্র্যাক হেলথ অ্যান্ড কেয়ার ভিসার সুযোগ থাকবে এনএইচএসের নিয়ম মেনে। তবে সোশ্যাল কেয়ার স্টাফ এই সুযোগ পাবে না। দক্ষ কর্মীরা তাঁদের পরিবারকে নিয়ে আসার সুযোগ পবেন। এতে ব্রিটেনের ভেতর থেকেই কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে ভালো কর্মী আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন হোম সেক্রেটারি।
আর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যোগ্যতা থাকলে বাধাহীনভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবে।
ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিক থমাস-সাইমন্ডস বলেছেন, স্বাস্থ্য ভিসা থেকে কেয়ারওয়াকারদেরকে বাদ দেওয়া, এটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, যারা দক্ষতা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাদের টরি সরকার মূল্যায়ন করছে না। এটি তাদের জন্য অপমানজনক।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেছেন, সরকার চাচ্ছে, যাঁরা এই দেশে বসবাস করছেন, নিয়োগকর্তারা যেন তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন।
নতুন এই ঘোষণায় নেই দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেনে বসবাসরত লাখ লাখ কাগজপত্রহীন মানুষের বৈধতার বিষয়টি। এতে হতাশ মানবাধিকারকর্মীসহ, মানবেতর জীবনযাপন করা লাখ লাখ মানুষ। ব্রিটেনে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধদের কোনো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে নাই। ব্রেক্সিট-পরবর্তী, বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত, এসব কাগজপত্রবিহীন মানুষ সাধারণ ক্ষমার আশায় দিন গুনছিল।