নিউজ ডেস্ক : শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব জুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো। শুধু বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই নয়, বছরব্যাপী নানা আয়োজনে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে। সোমবার প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে সংস্থার ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বিশ্বের ১৯৫টি দেশে উদযাপন হবে। ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ
বুধবার গণভবনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর সঙ্গে মুজিববর্ষ একযোগে পালনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। ইউনেস্কো এই আয়োজনে যুক্ত হওয়ায় সুযোগ সৃষ্টি হলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আরো ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি আলতে সেনজাইজারের সভাপতিত্বে এবং ইউনেস্কো মহাপরিচালক মিজ অদ্রে আজুলে, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের চেয়ারপারসনদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত পাশ হয়। বুধবারের সভায় আরো জানানো হয়, বছরব্যাপী অনুষ্ঠেয় ‘মুজিববর্ষ’ জাতীয় অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন হবে আগামী ১৭ মার্চ রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে।
সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হতে হবে। বঙ্গবন্ধু এই মাটির সন্তান, কাজেই এ অনুষ্ঠান কোনো রংচটা অনুষ্ঠানে রূপ নিতে পারবে না।’ সভার শুরুতে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার সাহায্যে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগামী ১৭ মার্চ বিকাল ৪টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ফ্লাইপাস্ট, ১০০ শিল্পীর অংশগ্রহণে যন্ত্রসংগীত, বাংলা এবং ইংরেজিতে থিম সং পরিবেশন, ৫৫ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং লেজার শো।
তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার হাতে ‘শ্রদ্ধা স্মারক’ তুলে দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন। কামাল আব্দুল নাসের বলেন, পাশাপাশি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্যারিসে ২০৬তম ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডসভায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে উদযাপনের প্রস্তাব সংস্থাটির সাধারণ সভার ৪০তম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। তবে এই প্রস্তাবে দুই সদস্য রাষ্ট্রের লিখিত সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে।
বাংলাদেশের এই প্রস্তাবে ভারত, জাপান, কিউবা, নেপাল ও পোল্যান্ড লিখিত সমর্থন দেয়। ফলে ২০৬তম বোর্ডসভায় প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর ইউনেস্কো সাধারণ সভার চলতি অধিবেশনের প্রগ্রাম ও বাজেট সম্পর্কিত এপিএক্স কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবনাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সুপারিশসহ প্লেনারি সেশনে পাঠানো হয়।
প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, প্রথম সচিব নির্ঝর অধিকারী, ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদল প্রস্তাবনাটি প্রস্তুতে সহায়তা করে।
ইউনেস্কো শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। ৫০ বছর বা এর গুণিতক যেকোনো বার্ষিকী যদি ইউনেস্কোর কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে ওই দিবস যৌথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই হিসাবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিবর্ষের বিশ্বস্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এর ফলে ইউনেসকো বা এর ১৯৫ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ বা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই দিবসটি পালনের সুযোগ তৈরি হলো।