নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই আয়োজনে যুক্ত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, আকাশ পথে তিনি বাংলা সিনেমা দেখেন। এমনকি কেউ তার কাছে সিনেমা পাঠালে তিনি সেটা আগ্রহ সহকারে দেখেন। আর সিনেমা দেখতে তার ভালোই লাগে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘প্লেনে করে দেশের বাইরে গেলে দেশি সিনেমা দেখি। প্রোডাকশনগুলো খুব ভালো লাগে। কেউ যদি পেনড্রাইভে ছবি পাঠান সেটাও দেখি। সিনেমা দেখতে ভালোই লাগে। আমাদের দেশের সুপ্ত প্রতিভা আছে। তাদের কাজ দেখে মুগ্ধ হই।’
তিনি বলেন, সিনেমায় জীবন দর্শন প্রকাশ পায়, ইতিহাসের বার্তাবাহক। তাই বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষামূলক নির্মাণে উৎসাহ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার মোট ২৭টি বিভাগে ৩২টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সিনেমা হয়েছে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘গোর’। এর মধ্যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ থেকে চিত্রনায়ক সিয়াম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও ‘গোর’ থেকে চিত্রনায়িকা দীপান্বিতা মার্টিন হয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। সর্বোচ্চ ১১টি পুরস্কার পেয়েছে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘গোর’।
আর ৮টি পুরস্কার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী’। ‘গোর’ সিনেমার জন্য ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ চারটি পুরস্কার পেলেন গাজী রাকায়েত।
আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করেছেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। তবে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাওয়া জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি। তার পক্ষে এটি গ্রহণ করেন তার মেয়ে অভিনেত্রী মুক্তি। পুরস্কার দেওয়ার আগে তাদের নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসাদ বলেন, ‘যুদ্ধ ফেরত আসাদকে জোর-জবরদস্তি করে চলচ্চিত্রে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭২ বেতার-মঞ্চ, ৭৩ সালে চলচ্চিত্রে। যারা আমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বাদ পড়ার ভয়ে তাদের কারও নাম স্মরণ করছি না। তবে একজনের কথা বলতেই হয়- সোহেল সামাদ, সহযোদ্ধা। বয়সে ছোট, অধিকারে বড়। ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের ২৫ বা ২৬ তারিখে প্রথম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঢাকায়। সেখানেই আমার কণ্ঠকে প্রথম ব্যবহার করা হয়। সোহেল সামাদ আমাকে মঞ্চে তুলে দেয়। ব্যস শুরু হয়ে গেল। কৃতজ্ঞতা জানাই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতি। যারা আমাকে এ সম্মানের উপযুক্ত মনে করেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের সবার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
এরপর মঞ্চে কথা বলেন তথ্যসচিব মকবুল হোসেন, জাতীয় সংসদের তথ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারগুলো :
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র- যৌথভাবে
১. গোর (গাজী রাকায়েত, ফরিদুর রেজা সাগর)
২. বিশ্বসুন্দরী (অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু)
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র- আড়ং
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র- বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক- গাজী রাকায়েত হোসেন (গোর)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা- সিয়াম আহমেদ (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- দীপান্বিতা মার্টিন (গোর)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা- ফজলুর রহমান বাবু (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেত্রী- অপর্ণা ঘোষ (গণ্ডি)
শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতা- মিশা সওদাগর (বীর)
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী- মুগ্ধতা মোর্শেদ হৃদ্ধি (গণ্ডি)
শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার- শাহাদৎ হাসান বাধন (আড়ং)
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক- বেলাল খান (হৃদয় জুড়ে)
শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালক- প্রয়াত সহিদুর রহমান (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ গায়ক- ইমরান মাহমুদুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা- যৌথভাবে
১. দিলশাদ নাহার কণা (বিশ্বসুন্দরী)
২. সোমনুর মনির কোনাল (বীর)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার- কবির বকুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ সুরকার- ইমরান মাহমুদুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার- গাজী রাকায়েত (গোর)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- গাজী রাকায়েত (গোর)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা- ফাখরুল আরেফীন খান (গণ্ডি)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক- শরিফুল ইসলাম (গোর)
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক- উত্তম কুমার গুহ (গোর)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক- যৌথভাবে
১. পঙ্কজ পালিত (গোর)
২. মাহবুব নিয়াজ (গোর)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক- কাজী সেলিম আহমেদ (গোর)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা- এনাম তারা বেগম (গোর)
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান- মোহাম্মদ আলী বাবুল (গোর)