নিউজ ডেস্ক: ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি ইস্যুতে কথা বললেন ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। তিনি আশা করেছেন, পরীমনি যখন ফিরবেন, তাঁর ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন, যে শিক্ষা তাঁর আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। আর আইন তার নিজের গতিতে চলবে।
গত সপ্তাহে পরীমনিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি এখন কারাগারে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারের পাঠানোর পরদিনই পরীমনির গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন শাকিব খান।
তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েক দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমনিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সহকর্মী হিসেবে যত দূর জানি, পরীমনি মা–বাবাহীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে পরীমনি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।’
পরীমনিকে গ্রেপ্তারের ইস্যুতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন শাকিব খান। শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ডকে রহস্যজনকও বলছেন তিনি। পরদিন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পরীমনির সদস্যপদ সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্তকে ন্যক্কারজনক বলেও অভিহিত করেছেন শাকিব খান। তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, কয়েক দিন ধরে খেয়াল করছি, শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনি গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি কোনো ধরনের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তেই পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে! সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীর আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সঙ্গে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?’
শাকিব খান আরও লিখেছেন, ‘বিগত দিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এর চেয়েও ভয়ংকর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি; বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচরণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এ জন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা। এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সামনে আরও ঘোর বিপদ।’
শাকিব খান লিখেছেন, ‘যারা পরীমনিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরও খুঁজে বের করা উচিত। পরীমনি ৩০টির বেশি সিনেমার সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তার হাতে আছে আরও কয়েকটি সিনেমা। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমাতেও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, তাদের আয়ের উৎসও খুঁজে বের করা উচিত।’
শাকিব খানের কথায় উঠে এসেছে পরীমনির নানা শামসুল হকের বিষয়টিও। তিনি এই করোনা মহামারির মধ্যে তাঁর নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন বনানী থেকে পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে। কিন্তু প্রিয় নাতনির দেখা তিনি পাননি। ‘১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমনির শতবর্ষী নানা তাঁর নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার এই ভয়াবহতাও আটকাতে পারেনি তার বৃদ্ধ নানাকে, রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কী নিষ্ঠুর! পরীমনির সঙ্গে নাকি দেখাই হলো না বৃদ্ধ নানার। আদালত চত্বরেই পরীমনির নানাকে বলতে শুনেছি, “পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।”’
পরীমনির মামলার বিষয়ে শাকিব খান বললেন, ‘পরীমনির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। সে যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে, তার কী অপরাধ, সেটা বিশ্লেষণেও যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন–আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমনির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।’