নিউজ ডেস্ক: অভিবাসীদের সমাজের মূলস্রোতে আনার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাব্বানি খান ফ্রান্সের সিনেটের সর্বোচ্চ সম্মান ‘মেডেল ড’অনার ডু সিনেট’ অর্জন করেছেন। এই সম্মানজনক পুরস্কারটি শনিবার, অ্যাসোসিয়েশন OFIORA-এর সদর দপ্তরে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের সিনেটর ইয়ান ব্রসা তুলে দেন। রাব্বানি খান ফ্রান্সে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই পদক অর্জন করলেন।
রাব্বানি খানের এই পুরস্কার প্রাপ্তি তার বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি। তিনি OFIORA-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, স্তা মিউনিসিপালিটির একজন নির্বাচিত কনসেইলর মিউনিসিপাল এবং একাডেমি ডে ক্রিকেট দে স্টাঁ-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। এই সবকিছুই ফ্রান্সে অভিবাসীদের জীবনের উন্নয়ন এবং সমাজে সফলভাবে একীভূত করার একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
সিনেটর ইয়ান ব্রসার অভিমত
সিনেটর ইয়ান ব্রসা তার বক্তব্যে বলেন, “আজ আমরা রাব্বানি খানকে সম্মান জানিয়ে ফ্রান্সের সেই মূল্যবোধকে উদযাপন করছি যা বৈচিত্র্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। OFIORA-এর মতো একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার অভিবাসীকে ফরাসি ভাষা শেখানো থেকে শুরু করে সমাজে সফলভাবে একীভূত হতে সাহায্য করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফ্রান্স একটি রাজনৈতিক জাতি, যা মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, জাতিগত বিভাজনের ওপর নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের পার্লামেন্টে প্রায়ই অভিবাসীদের ইন্টিগ্রেশন নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু রাব্বানি খান ও তার প্রতিষ্ঠানের কাজ সেই সব তর্ক-বিতর্কের চেয়ে শক্তিশালী উদাহরণ। অভিবাসীদের জীবনমান উন্নত করতে তার এই অসাধারণ অবদানই তাকে এই সম্মানের জন্য যোগ্য করে তুলেছে।”
‘মেডেল ড’অনার ডু সিনেট’: কেন এবং কারা পান এই সম্মাননা?
‘মেডেল ড’অনার ডু সিনেট’ ফ্রান্সের একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা, যা সমাজের উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের জন্য দেওয়া হয়। এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়; এটি ফ্রান্সের সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অবদানের স্বীকৃতি। এ ধরনের পুরস্কার পেতে হলে কাজের মধ্যে থাকতে হয় মানুষের জন্য গভীর দায়বদ্ধতা এবং সমাজের উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব।
রাব্বানি খানের প্রতিক্রিয়া
পুরস্কার গ্রহণের সময় রাব্বানি খান আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “এই সম্মান শুধু আমার একার নয়; এটি আমাদের পুরো OFIORA পরিবারের। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি অভিবাসীদের জীবনে পরিবর্তন আনতে, তাদের শিক্ষা, সামাজিক ইন্টিগ্রেশন এবং জীবনের গুণগত মান উন্নত করতে। আমি এই পদকটি আমার দলের প্রতি উৎসর্গ করছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে এবং আমাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। আজকে থেকে আরও বেশি কাজ করার আরও বেশি করে নিজেকে তুলে ডোরার জন্য আমি এবং আমার দোল প্ৰতীক্ষাবদ্ধ। আজকে থেকে আরেকটি নতুন চেলেঞ্জের শুরু যেনো আমাদের কাজের ম্যান ও পরিধি বাঘের থেকে বড় ও বেশি হয়। ”
তিনি আরও বলেন, “OFIORA-র প্রতিটি সদস্য এই পুরস্কারের অংশীদার। ফ্রান্সের সমাজে বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করার আমাদের প্রচেষ্টা আজ একটি নতুন মাত্রা পেল। এই স্বীকৃতি আমাদের কাজের প্রতি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন OFIORA-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমেদ আলী আকবর সুমন, Île-de-France অঞ্চলের ফ্রান্স ক্রিকেটের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইফতিখার শরিফ ছায়েফ, এবং OFIORA-এর সদস্যরা। আরও উপস্থিত ছিলেন মারজিউল ভূইয়া, আতিকুর রহমান মিলন, প্রতীক্ষা সাহা, ইমানুয়েল গোমেজ, জাহিদ হাসান, তাহমিনা আক্তার, মাসুদুর রহমান এবং প্যারিস হলিডে আবাসনের পরিচালক সোহেল আহমেদ।
একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
রাব্বানি খানের এই অর্জন শুধু তার একার নয়, এটি গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তার কাজ প্রমাণ করে যে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করলেই স্বীকৃতি আসবে। ফ্রান্সে অভিবাসীদের সফল ইন্টিগ্রেশনের যে চিত্র রাব্বানি খান এবং তার প্রতিষ্ঠান তুলে ধরেছে, তা আগামী দিনের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।