নিউজ ডেস্ক: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমরা এখন সাশ্রয় নীতি বা ব্যয় সঙ্কোচন নীতি অনুসরণ করছি। দুটি বিভাগ করতে গেলে অনেক অর্থ ব্যয় হবে।”
পদ্মা ও মেঘনা নামে নতুন দুটি বিভাগ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার নিকারের সভার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন সাশ্রয় নীতি বা ব্যয় সঙ্কোচন নীতি অনুসরণ করছি। দুটি বিভাগ করতে গেলে অনেক অর্থ ব্যয় হবে। সেজন্য আপাতত এ প্রস্তাবটি স্থগিত করা হয়েছে।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “পদ্মা ও মেঘনা নামে যে দুটি নতুন বিভাগের প্রস্তাব বৈঠকে উঠেছে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।”
বর্তমানে দেশে যত বিভাগ রয়েছে, তার সবই জেলার নামে। সেগুলো হল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ।
বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা নিয়ে পদ্মা বিভাগ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের ছয় জেলা নিয়ে মেঘনা বিভাগ গঠন করার উদ্যোগের কথা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল।
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে নিকারের ১১৮তম সভা হয়। সেখানে প্রস্তাবটি উঠলে তা ‘আপাতত’ স্থগিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রি পরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা নিকারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা ও মেঘনা প্রশাসনিক বিভাগ করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার বিষয়ে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগের বিষয় আছে, এই মুহূর্তে যেহেতু এত ফান্ডিং…, সরকার যেহেতু কাজকর্ম কম করছে এক্সট্রা খরচ নেওয়ার জন্য। সেজন্য আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।”
অর্থায়নের বিষয়ে আরেকটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা ডিভিশন করতে গেলে এখানে ১ হাজার কোটি টাকার উপরে লাগবে আনুমানিক। আরও বেশিও লাগতে পারে সবগুলো বিভাগকে যদি আমরা একসাথে হিসাব করি, তাহলে অনেক টাকা লাগবে।
“সুতরাং এই মুহূর্তে দুটো বিভাগ করতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। সরকার যেহেতু ব্যয় ব্যবস্থাপনা করছে বা ব্যয় সাশ্রয় করছে, সেজন্য আপাতত এটা স্থগিত রাখা হয়েছে।“
এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “খরচের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা আজকে বলতে পারি নাই। সুনির্দিষ্টভাবে কত টাকা লাগবে, সেই বিষয়টা একটু দেখতে বলা হয়েছে।”
বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে নতুন বিভাগ করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু নতুন বিভাগের নাম কী হবে, তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার রাজনৈতিক নেতাদের।
সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রস্তাবিত বিভাগকে যথাক্রমে ‘মেঘনা’ ও ‘পদ্মা’ হিসেবে নামকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস ভবনের উদ্বোধনী আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ স্লোগানের আদলে নদীর নামে হবে এ বিভাগ দুটির নাম। ফরিদপুর বিভাগের নাম হবে ‘পদ্মা’ আর ‘মেঘনা’ হবে কুমিল্লা বিভাগের নাম।
সে অনুযায়ীই নিকারের সভায় নতুন দুই বিভাগ করার প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে শনিবার বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলটির নেতারা ঘোষণা দেন, ক্ষমতায় গেলে তারা ‘কুমিল্লা’ নামেই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করবেন।