নিউজ ডেস্ক: অস্ত্র আইনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত রায় ঘোষণা করেন। এরপর তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের দিকে তাকিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় কান্না করেন পাপিয়া।
তাদেরকে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় ২০ বছর ও (চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে একই সঙ্গে সাজা চলবে৷ যে কারণে আসামিদের ২০ বছর সাজা খাটতে হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টায় আসামি পাপিয়া ও সুমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তাদেরকে আদালতে গারদের রাখা হয়। পরে বেলা ২ টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। এরপর বিচারক দুপুর ২ টা ২২ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শেষে দুপুর ২ টা ২৬ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন।
আসামি পাপিয়ার আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত আইনগত দিক বিবেচনা করে মামলায় দেয়নি। এটা একটা সাজানো নাটক। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
এদিকে মাত্র নয় কার্যদিবসে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার বিচার কাজ শেষ হয়। গত ২৭ সেপ্টেবর আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত ১২ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেন। এ মামলায় গত ২৯ জুন আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের উপ-পরিদর্শক আরিফুজ্জামান তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। পরে গত ২৫ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। গত ৩১ আগস্ট মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী র্যাবের উপপরির্দ্শক সাইফুল আলম প্রথম আদালতে সাক্ষ্য দেন। পরে ধারাবাহিক সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্য শেষ হয়। এদিন আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের উপপরিদর্শক আরিফুজ্জামানের সাক্ষ্য দেন।
এ মামলায় ছয় কার্যদিবসে মোট ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে অস্ত্র আইনে করা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন পাপিয়া দম্পতি। পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপনে এ মামলার আসামি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি করেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। পরে আসামি মফিজুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এ এফ এম গোলাম ফাত্তাহ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। তবে আসামি পাপিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূইয়া আংশিক যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে আদালত পাপিয়ার পক্ষে অবশিষ্ট যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। ওই দিন পাপিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত রওশন’স ডমিনো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকের পাতা, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র্যাব। ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।