1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

“আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে নিজেকে বাচান”

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

 

সায়মা রহমান তুলি

 

 

– সায়মা রহমান তুলি: প্রতিষ্ঠাতা, ইনভিশন একশন রিওয়ার্ড এসেট (ইয়ারা), (স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নারীর ক্ষমতায়নে গ্রামভিত্তিক অনুপ্রেরণা মূলক কার্যক্রম)।

করোনাকালীন এ সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে হতাশা তারই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। আজ আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস, ইয়ারা টীম গ্রামের মেয়েদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে যে অনুপ্রেরণা মূলক আলোচনা করে সেটাই শেয়ার করছি আপনাদের সাথে।

আত্মহত্যার প্রবণতা টিনেজার ও তরুন ছেলে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কারন এ বয়সে সবাই আবেগপ্রবণ থাকে এবং হঠাৎ করেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিছু আত্মহত্যার কাহিনি শুনে সবাই মোটামুটি অবাক হয়। টিনেজারদের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের সাথে ঝগড়ার কারনে, পরীক্ষার রেজাল্ট, প্রেমের সম্পর্ক, ইভটিজিং, তরুনদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, স্বামী স্ত্রীর অমিল
নিজের চাহিদা অনুযায়ী শখের জিনিস না পাওয়া এমনকি প্রিয় সেলিব্রেটির প্রয়ান সংবাদে আহত হয়েও মানুষ নিজের জীবনকেই শেষ করে দেন।

যে কারনগুলো উল্লেখ্য করলাম সেগুলো আপনার আমার কাছে শুনতে বোকা বোকা মনে হলেও আপনার আমার কানে যে সংবাদগুলো আসছে তা কিন্তু এরকমই। কারনগুলো তুচ্ছ থাকে যেটাকে খুব বড় করে চিন্তা করা হয়, এত বড় যে সে জীবনই দিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের মানসিক দুর্বলতা মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে।

আত্মহত্যার চিন্তা যেন কখনোই মাথায় না আসে সেভাবে নিজের ব্রেনকে ট্রেনিং দিতে হবে। কিশোর বয়স থেকেই বয়স অনুযায়ী মেডিটেশন, অটোসাজেশন ও প্রার্থনার নিয়মিত প্র‍্যাকটিশ থাকতে হবে। গুড প্যারেন্টিং দারুন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাবা মা সন্তানের মধ্যে বোঝাপড়া জরুরী। শিশুর প্রথম স্কুল পরিবার সেখানেই তাকে শেখাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয় যেমন-

১. অন্যের কোন কিছু আছে আমার নেই, আরেক জনের মত আমারও একই জিনিস লাগবেই লাগবে। শিশুর এই জিদকে আজ প্রশ্র‍য় দিলেন ত সারাজীবনের জন্য তাকে একজন পরশ্রীকাতর রোগীতে পরিণত করলেন। শিশুদের জেদ কে প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের বুঝাতে হবে।

২. জীবন জুয়া খেলা নয় হঠাৎ করেই জীবনে কোন প্রাপ্তি নেই কোন শর্টকাত মেথড নেই কঠিন পরিশ্রম দিয়ে সততার সাথে উপার্জন করতে হয়। পরিশ্রম করলে তুমি অবশ্যই পারবে।

৩. সন্তান কোন বিষয় পড়ালেখা করবে বড় হয়ে কি করবে এই তাগিদটা কখনো বাবা মা দিবেন না। তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণ করার ক্ষমতা তৈরি করতে সহযোগিতা করুন। পড়ালেখার খরচ যোগান বলে তাকে খোচা দিয়ে কথা না বলে এইচ এস সি এর পর থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি কিভাবে উপার্জন করা যায় সে পথ দেখান। সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলে, সন্তান দেখা যায় সবকিছু শেয়ার করে তখন সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়।

বাবা মা কে বুঝতে হবে সন্তান কি চায় কিভাবে তার মংগল হবে তা তাকে কঠোরভাবে নয় অন্যের সাথে তুলনা করে নয় যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। আবার সন্তানের অবহেলায় বয়স্ক বাবা মাও অনেক সময় নিজের মরন কামনা করে মানসিক কষ্টে। তাই সন্তানকেও বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।

প্রেমের সম্পর্কে আহত হয়ে নিজের জীবন উতসর্গ করা যে কতটা বোকামি তা আবেগপ্রবণ হয়ে বোঝা কঠিন তাই সবসময় মাথায় থাকা জরুরী সবকিছু পরিবর্তনশীল। জীবন সব সময় এক রকম কাটে না।

ইভটিজিং, বডিশেমিং কিংবা কোন প্রকার শারিরীক মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে বিচার চাইতে হবে, মেয়েদের হতে হবে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সাহসী নিজে ভিক্টিম হয়ে কেন নিজের প্রাণ দিবে? অনেক টিনেজারদের দেখা যায় তারা হতাশ এদের মধ্যে অনেকে হতাশার কারন কি প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। এদের মধ্যে বড় একটা গ্রুপ মোবাইল গেম, টিকটক, ফেসবুকে তথা গেজেটে আসক্ত। এরা না চাইলেও এদের মধ্যে কিছু রোগ বাসা বাধে, যেমন রাতারাতি তারকা খ্যাতি, নিজেকে সবচে ভালো মনে করা সুপেরিয়র কমপ্লেক্স, অন্যের সাথে তুলনা, নাই নাই একটা ভাব কস্ট বিরাজ করে। খেয়াল করে থাকবেন খুব আধুনিক ম্যাচিউরড মানুষও কিছু আচরন করে অন্যের কোন কর্মকাণ্ড দেখে ঠিক তেমনটাই করতে চায়। এসব মনোভাব জন্ম দেয় হতাশা। স্বামী স্ত্রী একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখা, দুজনের গুনের প্রশংসা না করে ত্রুটি খুঁজে বের করা স্বভাবের কারনে অনেক সময় সম্পর্ক এতটাই তিক্ততার পর্যায়ে যায় যে তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেয়। তাই কিভাবে সম্পর্ক যত্ন করা যায় সেদিকে মনোযোগী হওয়া জরুরী।
৩০ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষগুলো এক ভয়াবহ চাপে থাকে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। বন্ধুদের সফলতা দেখে নিজেকে ব্যর্থ মনে করে অনেকে। মনের মত ক্যারিয়ার না করতে পারার আক্ষেপ মানুষের আত্মবিশ্বাসকেই দুর্বল করে দেয়। করোনা কালে চাকুরী হারিয়ে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন নিজেকে শেষ করে দেবার কথা, যদিও তার কাছে অপশন থাকে অন্য কাজের আবেগে তাও ভুলে যান। মনে রাখা জরুরী করোনাকালীন সময়টাতে মানুষের বেচে থাকাটাই সবচে বড় চ্যালেঞ্জ।
আত্মহত্যা একটি ভুল সিদ্ধান্ত।

এ চিন্তা মাথায় আসা মাত্র যে কাজটি করতে হবে। যদি কাদতে ইচ্ছে করলে কাদবেন, ফ্রেশ হয়ে খুব চুপ চাপ ঠান্ডা মাথায় বসতে হবে, হাতে হাত রাব করে মুখমন্ডল এ স্পর্শ অনুভব করতে হবে। এক গ্লাস পানি, চা/ কফি বা চকলেট খেতে খেতে পছন্দের কোন গান শুনতে হবে। এবার একটি কাগজ কলমে লিখতে হবে কেন এ চিন্তা করছি। এবার নিজের নেগেটিভ অভিজ্ঞতার একটা লিস্ট করতে হবে। ঠিক এর পাশেই নিজের জীবনের প্রাপ্তি
সুখের স্মৃতি পয়েন্ট আকারে লিখতে হবে।
এবার আপনি কি করতে চান বা হতে চান কিংবা আপনার কি কি সম্ভাবনা আছে,
সেই অনুসারে কেমন এফোর্ট দিতে হবে তার একটা সুন্দর প্ল্যান করুন। একটা রুটিন মাফিক লাইফস্টাইল এ চলুন। সদয় হোন নিজের প্রতি নিজের পরিবেশ ও প্রতিবেশ এর প্রতি।
বাগান এর যত্ন নেওয়া, শখের কাজ করা কোন না কোন কিছু তে ব্যস্ত রাখুন নিজেকে। প্রয়োজন মনে করলে মায়া এ্যাপের মাধ্যমে বিনামূল্যে নিতে পারেন ফ্রি কাউন্সিলিং সেবা।
আত্মহত্যার চিন্তা এলে খুব কাছে কাউকে জানান। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে ফেসবুক থেকে একটা নোটিফিকেশন আসে এতে বন্ধুরা সহযোগিতা করে যেন ভুল কাজটি না করেন।

হতাশার সময় এতটা অস্থিরতা কাজ করে যে মানুষের আপনজন কে আছে সে নিজেও ভুলে যায় তার সাথে শেয়ার করার কথা। তাই সবসময় পজিটিভ মানুষদের সাথে চলুন, নেগেটিভিটদের একদম এড়িয়ে চলুন। পাছে লোকে কিছু বলে এই লোকেরা সারাজীবন ই যন্ত্রনা দিয়ে যাবে এদের জন্য নিজের জীবনটা দিবেন না প্লিজ।
আপনার জীবনটা আয়নায় আপনার প্রতিবিম্ব মাত্র আপনি যেমন সাজাবেন তেমনি হবে।
তাই সবচিন্তা ঝেড়ে নিজের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন আজ থেকেই। সব সমস্যারই সমাধান আছে। আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। কেবল ভুল সিদ্ধান্ত । সমাধান খুজুন। অল্পতে খুশি থাকুন। প্রতিদিন হেসে একবার বলুন লাইফ ইজ বিউটিফুল।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys