নিউজ ডেস্ক: নানাবাড়ি যাওয়ার বায়নাটা বাবা-মায়ের কাছে অনেক জোরালো ছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহিনের। কিন্তু বাবার আদরে মাহিনের সেই বায়নাটি নিমেষেই শান্ত হয়ে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমো খেয়ে বাবা-মা যে শেষ বিদায় নেবেন তা অবুজ মাহিন বুজতেও পারেনি।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার উদ্ধার হওয়া নিহতদের মরদেহের মধ্য থেকে বাবা-মা ও ছোট বোনের লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে বারবার চিৎকার করে মাহিন বলছিলেন— মা ওমা আমার কপালে তো তোমার চুমোটা লেগে আছে, তুমি কই? মাহিনের এমন আর্তনাদ শুনে উপস্থিত সদর ইউএনও নাহিদা বারিকসহ অনেকেই চোখের জলে বুক ভাসান।
ইউএনও বুকে জড়িয়ে ধরেন মাহিনকে। বাবা বাবা বলে অনেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাজারও বাবা ডাকে মাহিন তৃপ্ত হয়নি। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন মাহিন। অবশেষে মাহিনকে তার বাবা আনোয়ার শেখ ও মা মাকসুদার মরদেহ বুজে নিতে হয়েছে। আর আট মাস বয়সি ছোট বোন মানসুরার সন্ধান পায়নি।
তাদের বাড়ি রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায়। সোমবার বিকালে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দুজনকে বুঝে নিয়ে রাতেই শনিরআখড়য় তাদের দাফন করা হয়।
মাহিন বলেন, সে শনিরআখড়ার গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তারা তিন ভাইবোনের মধ্যে সে বড়, মেজ মাহিয়া আর বাবা-মায়ে সঙ্গে থাকা মানসুরা। তার নানাবাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরের চরক্যাওড়া হোগলারকান্দি গ্রামে। রোববার দুপুরে হঠাৎ বাবা-মা আমার নানাবাড়ি মুন্সীগঞ্জে যাবে। শুনে আমিও যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি। তখন বাবা বলল— কাল সকালেই আমরা চলে আসব।
একটি রাত তোমার ছোট বোন মাহিয়াকে নিয়ে বাসায় থাকো। মাও বাবার মতো আমাকে অনেক আদর করে বুজিয়ে বলল, আর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা-মা দুজনই আমার ও মাহিয়ার কপালে মুখে অনেক চুমো খেলো।
পর দিন বাবা-মায়ের কোনো ফোন না পেয়ে নানাবাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারি বাবা-মা কেউ মুন্সীগঞ্জে যায়নি। তখন টেলিভিশনে খবর দেখে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির স্থানে এসে প্রথমে বাবা ও পরে মায়ের লাশ শনাক্ত করি। ছোট বোন মানসুরাকে এখনও পাইনি।
নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও নাহিদা বারিক জানান, মাহিনের আহাজারিতে নিজেকেও শান্ত রাখতে পারিনি। শিশু বয়সে বাবা-মা হারালেন মাহিন ও তার ছোট বোন মাহিয়া। তাদের বয়সি আমারও একটা সন্তান আছে। একদিনের জন্য সন্তানকে দূরে রাখতে পারি না অনেক কষ্ট হয়।
তিনি জানান, ঘাতক জাহাজটি আটকের জন্য চেষ্টা চলছে। রবি, সোম ও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মরদেহের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এখনও ডুবুরিদের অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার সাবিত আল হাসান নামক লঞ্চটি ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। আনুমানিক সোয়া ৬টার দিকে এসকে থ্রি নামক একটি কোস্টার জাহাজ উপজেলার চরসৈয়দপুর এলাকায় পেছন থেকে লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। পরেই অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। তথ্য সূত্র: যুগান্তর