নিউজ ডেস্ক: করোনামুক্ত হয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শারীরিকভাবে শতভাগ ফিট না হলেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। করোনা সংকট, বন্যা সমস্যাসহ নানা জাতীয় ইস্যুতে তিনি নিজের অভিমত তুলে ধরছেন স্বশরীরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নতুবা লেখনিতে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। চিঠিটি এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। কী আছে জাফরুল্লাহর লেখা ২৬৬৪ শব্দের চিঠিতে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, আগস্টে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোভিড-১৯’র চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। জাতীয় সংকটে দেশবাসীর জন্য স্বল্পমূল্যের এই সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন জাফরুল্লাহ।
খোলা চিঠিতে এই মুক্তিযোদ্ধা দেশের চলমান পরিস্থিতি, সংকট নিয়ে লিখেছেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঈদুল আজহার দিন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে তাকে দেখতে যেতে বলেছেন।
চিঠির শুরুতে ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন নাগরিকের খোলা চিঠি।
অতীতে আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এই খোলা চিঠি লিখছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কেউ না কেউ আমার এই খোলা চিঠিটি আপনার নজরে আনবেন এবং আমি একটি প্রাপ্তি স্বীকার পত্র পাব। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই একজন নাগরিকের আকাঙ্ক্ষা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহর লেখা চিঠিতে রাজনৈতিক বিষয়াবলীও স্থান পেয়েছে। তিনি লিখেছেন, ২০ বছর ধরে আমি বলে আসছি পুরানা সহকর্মী এবং অন্য সব রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে সুশাসনের লক্ষ্যে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কোনো চালাকির নির্বাচন নয়, দিনের নির্বাচন রাতে নয়। হয়তো বা সফলতা আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ সরকার প্রধানকে লেখেন, ঈদের দিন সময় করে সুস্বাস্থ্য কামনা করতে খালেদা জিয়ার বাসস্থানে যান, এতে দেশবাসী খুশি হবে এবং বঙ্গবন্ধু হেসে বলবেন, ‘ভালো করেছিস মা’।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চালু করতে যাওয়া করোনা হাসপাতাল উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ লেখেন, আগামী মাসে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধা নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা সমেত করোনার সাধারণ ওয়ার্ড চালু করবে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। রোগীদের সর্বসাকুল্যে দৈনিক খরচ পড়বে তিন হাজার টাকার অনধিক।
আপনি কি এই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা সমেত জেনারেল ওয়ার্ডের উদ্বোধন করবেন?
ডা. জাফরুল্লাহ লেখেন, ‘রোগীর হাসপাতালে ভর্তির জন্য কোনো দেশে তাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন লাগে না। করোনা আক্রান্ত হলে অথবা করোনা মুক্ত অন্য কোনো রোগাক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন উক্ত হাসপাতালের পরিচালক। কার্যত ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স বা ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার। কিন্তু বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে কিনা তার সিদ্ধান্ত দেন স্বাস্থ্য অধিদফতর, রোগী নিজে বা চিকিৎসক নন। কেন্দ্রিকতার এরূপ নিদর্শন পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। অপূর্ব সিদ্ধান্ত। মারহাবা। কেন্দ্রিকতা দুর্নীতির সহজ বাহন।’
দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নেই, এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারেরও। আলাদা আলাদা অনুমোদন মানে আলাদা তদবির ব্যয়, আলাদা দরাদরি। অবশ্য এর মধ্যে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের দক্ষতা প্রদর্শন মিডিয়ায় আলোড়ন আনন্দ সৃষ্টি করে বটে।
ডা. জাফরুল্লাহ লেখেন, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন নিয়মাবলী করেছেন যা পূরণ প্রায় অসম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থির করে দেন কয়টি পায়খানা, প্রস্রাবখানা থাকবে, কয়জন ডিপ্লোমা পাস নার্স থাকতে হবে।
চিঠির শেষ ভাগে তিনি সরকার প্রধানের উদ্দেশে লেখেন, সুস্থ থাকুন, আমলা ও গোয়েন্দাদের থেকে সাবধানে থাকুন, রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে ডেকে নিন।
প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি লেখেন , ‘ঈদের শুভেচ্ছা,জাফরুল্লাহ চৌধুরী’।