নিউজ ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এখন ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি বলছে, ‘অতি প্রবল’ এই ঘূর্ণিঝড়টি বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই ধেয়ে আসছে, এটি উভয় দেশেই বড় ধরণের আঘাত হানতে পারে। যা করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেই তৈরি হয়েছে আরেক দুর্যোগের আশঙ্কা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ২০ মে বিকেল নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে, আগামীকাল থেকে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা আশংকা করেছেন, অমাবস্যার প্রভাবের কারণে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়টি বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এবং বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের মধ্য উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা আম্ফানকে একটি শক্তিশালী ‘ক্যাটাগরি-৪’ ঘুর্ণিঝড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আটলান্টিক হারিকেন বা সুপার টাইফুন হিসেবে বিবেচিত।
সিএনএন টেলিভিশন বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানায়, এই মাত্রার ঘূর্ণিঝড় প্রবল বেগে স্থল নি¤œচাপে পরিনত হওয়ার পর দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে, এর আগে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি ৩০ ফুট (৯ মিটার) পর্যন্ত উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের আশংকা থাকে।
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বাসসকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রশাসনকে জনগণের জীবন বাঁচাতে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে ১৩ হাজার ৭৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়া আম্ফানের কারণে সেখানে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ লাখ লোককে বেরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কামাল জানান, প্রচুর পরিমাণে চাল ও নগদ অর্থসহ শিশুরখাদ্য, শুকনো খাবার এবং গবাদি পশুদের খাদ্য উপকূলীয় অঞ্চলে জেলা প্রশাসনের বরাবর পাঠানো হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ ১৮ নম্বর ‘বিশেষ বুলেটিনে’ বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকাল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বুলেটিনে ‘মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
এতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় যোগ করা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের উপকূলীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং চরগুলোকে।
আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নোয়াখালী, ফেনী, চ্যাটগ্রাম এবং কক্সবাজারের উপকূলীয় জেলা এবং উপকূলীয় দ্বীপসমূহ এবং চরগুলোকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। বাসস