সুরাইয়া নাজনীন:
গ্রামবাংলার ছোট্ট ছেলে। খেলার প্রতি ঝোঁক ছেলেবেলা থেকেই। রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট। আজ তিনি সবার প্রিয় অর্থাৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও। তিনি জুবাইদ আহমেদ। ইউরোপের মাটিতে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন বারংবার। ‘আমাদেরকথার’ সঙ্গে কথা হলো জুবাইদের তিনি জানালেন খেলা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং অর্জনের গল্প-
বর্তমান ক্রিকেট নিয়ে বলুন?
জুবাইদ: সম্প্রতি যে ত্রিদলীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়ে গেল তা নিয়েই শুরুতে বলতে চাই। জুলাইয়ের ৯ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত চলেছে ত্রিদলীয় আইসিসি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এখানে ইউরোপের তিন দেশ অংশগ্রহণ করেছে। ফ্রান্স, মাল্টা আর লুক্সেমবার্গ। আসাধারণ টুর্নামেন্ট হয়েছিল। মনমুগ্ধকর ছিল পুরো পরিসরটিই। আয়োজক ছিল মাল্টা ক্রিকেট ফেডারেশন- ইউরোপিয়ান ক্রিকেট নেটওয়ার্ক। আমি ফ্রান্স ন্যাশনাল টিমের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নাম ছিল এম দিনা কাপ। সফলতার সঙ্গে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে।
ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ নিয়ে জানতে চাই
জুবাইদ: ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ নিয়ে অনেক কথায় বলার আছে। এই টুর্নামেন্টের মধ্যে দেশের গৌরব ও ভাবমুর্তি জড়িয়ে আছে। ফ্রান্স বাংলাদেশের ডিপ্লোমেটিক সম্পর্কের ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এ বছরই প্রথম চালু করা হয়েছে তবে ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (এফবিপিএল) চলমান থাকবে বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রত্যাশা। ফ্রান্সে বাংলাদেশিদের আয়োজনে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট এটিই। আইসিসি স্বীকৃতি প্রাপ্ত ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ২৪টি দল অংশগ্রহণ করেছে এরমধ্যে বাংলাদেশি দলের সংখ্যা ৯টি। রাজধানী প্যারিসের সার্সেল এলাকার একটি ক্রিকেট মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জমজমাট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ টুর্নামেন্ট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ক্রীড়ামোদী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
এত বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল স্পন্সর কারা ছিলেন?
জুবাইদ: প্রথমবারের মতো মূলধারার এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল স্পন্সর করছে শাহ গ্রুপ ও মির্জা গ্রুপ নামের বাংলাদেশি মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশি মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উন্নয়নে সবসময় এগিয়ে আসে। এটা বিশ্ব দরবারে জাতিকে শতভাগ গৌরব এনে দেয় বলে আমি মনে করি। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের পরিধি আরও বেড়েছে। বাংলাদেশিদের খেলার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষৎতে এমন আয়োজন ক্রিকেটকে আরও সামনে নিয়ে যাবে। দেশকে মর্যাদাপূর্ণভাবে উপস্থাপনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
ফ্রান্সের জাতীয় ক্রিকেট দলে বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আপনি মাইলফলক রচনা করেছেন, আপনার কী তা মনে হয়?
জুবাইদ: ছোটবেলা থেকেই যেহেতু ক্রিকেট ভালোবাসি ফ্রান্সে এসেও ছাড়তে পারিনি। খেলাটাই আমাকে দুরের পথ চেনাতে সহযোগিতা করেছে। মানুষ আমাকে চিনেছে, হৃদয়ে জায়গা দিয়েছে এটা আমার পরম অর্জন। ইউরোপের মাটিতে প্রথম কোন বাংলাদেশি, বাংলাদেশে জন্ম ও বেড়ে উঠেও দেশের বাইরে কোন দেশের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেয়ার বিরল সন্মানও আমি পেয়েছি শুভাকাঙ্খিদের কারণেই। ওইযে বলছিলাম খেলাই আমাকে পথ চিনিয়েছে। ভালো খেলার কারনে, ফ্রান্স ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় আমার নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হয়েছে।
দেশের সেই মাটির ঘ্রাণ, গ্রামবাংলা নিয়ে কিছু বলুন
জুবাইদ: আমার গ্রামের বাড়ী ব্রাক্ষনবাড়ীয়া সদর উপজেলার পাখাচং গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আমার ভালোবাসা, আগ্রহ ছিল। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি মেঝো। ছোটবেলার সেই দুরন্ত দিনগুলো খুব মনে পড়ে। নানা রকম স্মৃতি এখনো আমাকে আবেগী করে তোলে। আমি লেখাপড়ার জন্য ইংল্যান্ডে যাই পরে ফ্রান্সে চলে আসি। তারপর ২০১৩ সাল থেকে ফ্রান্সের ঘরোয়া ক্রিকেট লীগে শীর্ষস্থানীয় ক্লাব উসকার হয়ে খেলা শুরু করি।