নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাদশ সংসদের ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশন শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত রয়েছেন। তবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে যোগ দেননি।
বাজেট অধিবেশন হবে মোট ১২ কার্যদিবসের। যাদের করোনা টেস্টের প্রতিবেদন নেগেটিভ, কেবল তারাই অধিবেশনের যোগ দিয়েছেন।
এবারের অধিবেশনে ১০০-১২০ জন এমপিকে উপস্থিত রাখার পরিকল্পনা করেছে সংসদ। আর তালিকাভুক্ত ৪৬ জন সাংবাদিক এবার বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা সাংবাদিক লাউঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও ঘোরাঘুরি করতে বা যেতে পারবেন না।
আজকের প্রথম অধিবেশনে যা থাকছে
বৈঠকের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হবে। এরপর রয়েছে শোক প্রস্তাব। প্রথমদিনের বৈঠকে প্রশ্ন-উত্তর এবং জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের (বিধি ৭১) নোটিশ নিষ্পত্তির কথা রয়েছে। দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর পর্ব রয়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হবে। চলতি সংসদের সদস্য আসলামুল হক ও আব্দুল মতিন খসরু যথাক্রমে ৪ ও ১৪ এপ্রিল মারা গেছেন। তাদের স্মরণ করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) বিকেল ৩টায় বর্তমান সরকারের তৃতীয় এবং বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। একই দিন অর্থমন্ত্রী অর্থবিল উত্থাপন করবেন। এরপর দুই দিন সাপ্তাহিক বন্ধ শেষে আগামী ৬ জুন মুলতবি অধিবেশন শুরু হবে। আগামী ৬ ও ৭ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা ও সম্পূরক বাজেট পাস হবে। এরপর প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে। এরপর ১ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তরপর্ব, বেসরকারি বিল উত্থাপন, সরকারি বিল পাস এবং অধিবেশন সমাপ্তি হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারাও বক্তৃতা করবেন।
কেমন বাজেট হবে?
বিশাল আকারের এই বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা। জোর দেওয়া হবে স্বাস্থ্য খাতে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করের বোঝা চাপাতে চান না তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, আসছে বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার। বাজেটে মোট আয় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ টানার চেষ্টা থাকবে বছর জুড়েই। এ জন্য বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। আর মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জীবিকার তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও প্রাত্যহিক কাজে যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনার তাণ্ডবে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে দরিদ্রের খাতায় নাম উঠেছে। এ অবস্থায় আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে জীবন ও জীবিকা। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৃষি খাতে থাকছে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা। থাকবে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার ঘোষণা। দরিদ্র মানুষকে সুবিধা দিতে বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। করোনা মহামারীতে মানুষ ও সরকারের আয় কমে যাওয়ায় সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা থাকবে বাজেটে।
করোনা পরিস্থিতি গত বছর বাজেট অধিবেশনের সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হয়েছিল। গত বছর মাত্র ৯ কার্যদিবস চলে বাজেট অধিবেশন। যা বাংলাদেশের বাজেট অধিবেশনের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত।