নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছে যে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত পি কে হালদারের মালিকানাধীন চারটি প্রতিষ্ঠানের ৯৬০ কোটি টাকা মঙ্গলবার জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে সম্প্রতি দুর্নীতি এবং ক্যাসিনো বিরোধী আলোচিত অভিযান এবং আরও কিছু অপরাধের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুল পরিমান অর্থ জব্দ করার কথা জানিয়েছিল।
সেই সঙ্গে জ্ঞাতউৎস বহির্ভূত আয়, দুর্নীতি কিংবা মানি লন্ডারিংয়ের মত অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থও জব্দ করা হয় বলেও বিভিন্ন সময়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু এই যে অর্থ বা টাকা জব্দ করা হয়, কী কারণে তা করা হয়?
আর শেষ পর্যন্ত জব্দ টাকার গন্তব্যই বা কোথায়?
যেসব কারণে টাকা জব্দ
বাংলাদেশে জব্দ হওয়া অর্থের প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত চিত্র কারও কাছ থেকেই পাওয়া যায় না।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের কয়েকটি সংস্থা কাজ করে, আর তাই এ ব্যাপারে সম্মিলিত তথ্য পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
হাইকোর্টে উপস্থাপিত তথ্যের বরাত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিবিসি বাংলাকে জানান যে ২০২০ সাল পর্যন্ত নগদ অর্থ এবং সম্পত্তি মিলিয়ে দুদকের কাছে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার জব্দকৃত অর্থ রয়েছে।
সাধারণভাবে বলা যায়, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ অর্থ কিংবা ব্যাংকে থাকা অর্থ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন জব্দ করতে পারে।
সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন না কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা দায়েরের পরে অর্থ জব্দ করা হতে পারে, আবার কোন ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের আগেও অভিযান চালানোর সময় অর্থ জব্দ করা হয়।
কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থ জব্দ করার সাথে সাথে অবশ্যই মামলা দায়ের করা হয়।
খুরশীদ আলম খান বলেন, সাধারণত জ্ঞাতউৎস বহির্ভূত আয়, সন্দেহজনক লেনদেন, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিং – এমন ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ জব্দ করা হয়।
“দুদক কোন অনুসন্ধানের স্বার্থে মামলা দায়ের করার আগেও যদি সন্দেহজনক লেনদেন বা ঘুষের ঘটনার অভিযোগ পায়, তাহলে সেটা জব্দ করতে পারে। আর মামলা দায়েরের পরেও পারে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেছেন, মানি লন্ডারিং এবং টেরর ফাইনান্সিং অর্থাৎ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থায়ন সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে যেকোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ জব্দ করা যায়।
তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণের জন্য ওই অর্থ সাত মাস পর্যন্ত জব্দ করে রাখতে পারে ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
‘ব্যক্তিস্বার্থের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব’ আওয়ামী লীগে, কীভাবে দেখছে নেতৃত্ব?
দাম কত হবে, আর কারা পাবেন না করোনার টিকা
দুই রকম অর্থ জব্দ করা যায় – নগদ অর্থ এবং ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ।
জব্দ টাকা কোথায় নেয়া হয়, প্রক্রিয়া কী?
অর্থ জব্দের পর যখন মামলা হবে, তখন দুদক, ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কিংবা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই অর্থের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে হয়।
নগদ অর্থ জব্দ করার ক্ষেত্রে আদালত নির্ধারণ করে যে ওই অর্থ কোথায় এবং কার জিম্মায় রাখা হবে।
দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, জব্দ অর্থ যে প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখা হচ্ছে – কোন ব্যাংক বা আইনশৃঙ্খলা-বাহিনী, সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে স্বাক্ষর করে আদালতে বিষয়টি অবহিত করতে হয়।
তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত মামলার সুরাহা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ওই জব্দকৃত অর্থ কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
“যদি প্রমাণ হয় যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং আদালতের সাক্ষ্য প্রমাণে সেটি প্রমাণিত হয়, তখন জব্দকৃত অর্থ রাষ্ট্র বরাবরে বাজেয়াপ্ত করা হয়।”
জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হলেও রাষ্ট্র সেই অর্থ খরচ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালত এ ব্যাপারে রায় দেয় এবং রাষ্ট্রকে জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
টাকা ব্যবস্থাপনা
অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি প্রমাণ করতে পারে যে তারা নির্দোষ, সেক্ষেত্রে আদালতের রায় সাপেক্ষ তারা জব্দ অর্থ ফেরত পেতে পারে।
এই অর্থ কি সরকারের আয়?
জব্দ করা অর্থ সাধারণত মামলার আলামত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
এক্ষেত্রে মামলার রায় যদি রাষ্ট্রের অনুকূলে যায়, তাহলে জব্দ হওয়া অর্থ রাষ্ট্রীয় অ্যাকাউন্টে বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থাৎ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যায়।
ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান জানান, মানি লন্ডারিং বা টেরর ফাইনান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি হয়। এক্ষেত্রে কারাদণ্ডের শাস্তি হলে অপরাধীর ৪-১২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
তবে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে জব্দ করা অর্থের দ্বিগুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাকৃত অর্থ রাষ্ট্রের আয় বা রাষ্ট্রের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। ওই অর্থ তখন রাষ্ট্র প্রয়োজন অনুসারে খরচ করতে পারে।