নিউজ ডেস্ক: সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার হল এমন একটি সংগঠন, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাতে বাবা-মা কিংবা পরিবারের কর্তারা বিভিন্ন প্রকার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। একটি শিশুর জন্য বিদ্যার্জনের প্রথম ধাপ হল পরিবার।
পরিবারেই তার শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি। তাই শিশুর মানসিক বিকাশ গঠনে পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব হল তাকে চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
শিশুর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করা, তাকে অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা। শুধু তাই নয়, শিশুরা যাতে ন্যায়-অন্যায়, সমাজের কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারে, সে বিষয়েও পরিবারকে সচেতন হতে হবে। আর এ জন্যই পরিবারকে বলা হয় শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কিন্তু বর্তমানে একটি পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ গঠনে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেখানে শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা দেয়ার কথা, আজ সেখানে মা-বাবার মধ্যেই প্রতিনিয়ত লেগে থাকে কলহ-বিবাদ। এসব বিষয় শিশুর মনে নেতিবাচক দাগ কেটে দেয়।
পরিবার যদি শিশুকে নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে না পারে, তাহলে তার মধ্যে সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটা কখনোই সম্ভব নয়। ফলে সে হয়ে ওঠে অপরাধপ্রবণ। এমনই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিছুদিন আগে আমাদের শহরে ঘটেছে। স্কুলপড়ুয়া একটি ছাত্র আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যা করার আগে সে তার মা-বাবাকে চিরকুটে লিখে গেছে, ‘আম্মা-আব্বু, তোমরা মিলেমিশে থেকো, আর কোনোদিন ঝগড়া করো না, আমার ভাই-বোনকে মেরো না।’
ছেলেটি তার বাবা-মায়ের ঝগড়া সহ্য করতে পারেনি। বাবা-মায়ের ঝগড়া, একে-অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা, অসহনশীলতা তার কোমল হৃদয়ে আঘাত করেছে। তাই সে বেছে নিয়েছে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ।
চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে যারা পড়েছেন তারা হয়তো জানেন, শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে তার মানসিক বিকাশের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ পরিবারে বাবা-মায়ের ঝগড়া-বিবাদ, কলহ দেখে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা ছোটবেলায়ই পিছিয়ে পড়ে এবং নেগেটিভ চিন্তাভাবনা নিয়ে বড় হয়, যা তাদের হতাশ করে তোলে।
মা-বাবার বিবাদ দেখে তারা একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনের কথা ভাবতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে পারে না সুন্দর জীবনের। আর এসব থেকে তারা মাঝে মাঝে আত্মহত্যাও করে ফেলে।
মা-বাবার সুষ্ঠু, সুন্দর চলাফেরা এবং পারিবারিক পরিবেশ শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এ জন্য সন্তানের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করা দরকার। মা-বাবার মধ্যে যাতে ঝগড়া, বিরোধ, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি না ঘটে সে ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।
শিশু যাতে কলহপ্রবণ ও অপরাধী পরিবারে বড় না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। তাহলেই শিশু আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।
আয়ান নুহা আলামিন : শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
খবর: যুগান্তর