1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

কেমন আছেন দুবাইয়ের প্রবাসী বাংলাদেশীরা ?

কাজী আসমা আজমেরী
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২০
আপনারা জানেন কি আরব দেশে কিনবা দুবাইতে আমাদের চেয়ে ভাইরা বাবারা চাকরি করে তারা কতটা কষ্ট করে?
আমার প্রথম দুবাইতে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল 2010 সালের জুন মাসের 7 থেকে 9 তারিখ পর্যন্ত, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি একা মেয়ে থাকায় আমাকে দুবাই শহরের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয় না এয়ারপোর্টে হোটেলেই থেকে যায়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত দুবাই সম্পর্কে আমার অনেক কৌতুহল আর সেই কৌতূহলে পূরণ টা হল 6 জানুয়ারি, গ্লোবাল বিজনেস সামিট দুবাই 2020 অংশগ্রহণ করার জন্য আমি দুবাই শহরে এসে পৌঁছায়। এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশের অনেক ধনী দুবাইয়ে ব্যবসায়রত বিজনেসম্যান দের পরিচয় হয়, দুবাই সম্পর্কে আমার কিছুটা ধারণা বদলে যায়, কিন্তু গত পরশুদিন রাতে আমি যখন ফোর সিজন হোটেলের 43th floor restaurant থেকে খেয়ে সাড়ে দশটার দিকে আমার হোটেলের দিকে হাঁটতে শেখ জায়েদ রোডে মিলেনিয়াম প্লাজা পর্যন্ত, এর ভিতর আমি না হলেও রাস্তার পাশে বসে থাকা 70 থেকে 80 জন লেবার কে দেখেছি তারা দুবাইয়ের শীতে কনকনে রাস্তায় বসে রয়েছে এবং তার অধিকাংশ লোকজনই হচ্ছে বাংলাদেশী লেবার। আমি তাদের ছবিটা তুলতে গিয়েও তুলিনি নিজের বিবেকের কাছে তারণায় যে তাদেরকে ছোট করা যাবে না, হচ্ছে আমাদের দেশের রিমেটিক যোদ্ধা। মাত্র 700Aed(18000 টাকা) থেকে 1100aed (25000 টাকা আনুমানিক) তারা কাজ করে 12 থেকে 14 ঘন্টা, যেটা আমি পেয়েছি এখানকার আমার ফিলিপিনো ইন্ডিয়ান বন্ধুদের কাছ থেকে তার হিসাব, যেখানে ফিলিপিনো ইন্ডিয়ানরা একই কাজে পেয়ে থাকে বারোশো থেকে 2000aed . খুব কষ্ট লাগলো ভেবে যে একি পরিশ্রম করে আমাদের বাঙালি ভাইরা এত কম টাকা পায়, একই কাজে ফিলিপিনো ইন্ডিয়ান কিংবা নাইজেরিয়ানরা অনেক বেশি পায়? এটা কেন কারণ আমাদের দেশের দালালদের মাধ্যমে এইসব লোক গুলো আসায় তাদের কর্মদক্ষতা কোন সার্টিফিকেট থাকে না, এজেন্ট গুলো ভালোভাবে নেগোশিয়েট করেনা, সরকারিভাবে বিশাল অবহেলা এবং ভালোভাবে সরকার এসব দেশের সাথে নেগোশিয়েট করে না কিংবা করতে পারেনা, জানিনা আমার জানা নেই‌।
আপনি জানেন কি নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া তে একজন বিল্ডিং লেবার প্রতি ঘন্টা তে আয় করে থাকে 30 থেকে 45 ডলার, যেটা ইমিন অ্যাপস এর মত একটি দেশে যারা শারীরিক কাজ করে তাদের কাজের দাম অনেক কম ,একটিও মেনে নেয়া যায়না। ইদু বলতে কোন শপিংমলে গেলে দেখা যায় যে একটি জুতার নাম 6 থেকে 10 হাজার দিরহাম, কোন হোটেলের বিল হচ্ছে বাংলাদেশী টাকার 6 লাখ টাকা, সেই বিল্ডিং তৈরি করতে একটি দিনমজুর মাত্র বেতন পায় সাত থেকে বারোশো দেরহাম? এক মাসে? হায়রে মুসলিম জাতি, তোমরা তো আমার মুসলিম ভাইদের ই নির্যাতন করো।
যারা দুবাইতে আসার জন্য অনেক লাফাতে থাকেন কোন কাজ দক্ষতা ছাড়া তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলি, ভাইকে দেখেছি এরা আপনাদেরই কারো বাবা কারো চাচা কারো বা ছোট ভাই কিংবা বড় ভাই, জীবনেও স্বীকার করে না কিংবা করতে পারে না তাদের এই করুন জীবনের কাহিনী। অধিকাংশ এইসব লোকেরা থাকার জায়গা এবং তাদের কর্ম ক্ষেত্রে আসার জন্য ট্রান্সপোর্ট পেয়ে থাকে, কাজকর্ম করার সময় তারা খাবারের টাকাটা পায় কিংবা তাদের খাবার ব্যবস্থা করা হয়, তাদের চিকিৎসা খুবই নিম্নতম ইন্স্যুরেন্সে করা হয় ‌। যেটা এমিরেটসের স্ট্যান্ডার খুবই নিম্ন। আর এইসব ভাইয়েরাই আপনাদের জন্য iPhone 11 plus দেশে পাঠায়, না হলে আপনারা হচ্ছে তাদের সাথে কথাই বন্ধ করে দেন। কজন জানে তার বিদেশী আত্মীয়-স্বজনরা কিভাবে দিন যাপন করে? আমার দেখা ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন এবং এখন দুবাই বাংলাদেশী দের জীবনযাত্রা অনেক নিম্নমানের সাধারণ এই দেশের মানুষের থেকে কয়েক গুণ। এর মূল কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থা, এখন মনে হয় দিন চলে গিয়েছে একজন মানুষ বিদেশে কাজ করবে, দেশে বসে তার সারা চৌদ্দগুষ্টি বসে বসে খাবে, এরা কত কষ্ট করে যে তাদের প্রতিটি টাকা আয় করে তা চিন্তা করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ওই ছোট্ট গ্রামে কিংবা শহরে আপনাদের ধারনা নেই ‌। অধিকাংশ লোকজনই যখন কোম্পানি তাদের লাঞ্চের টাকা দেয় তারা না খেয়ে শুকনো রুটি খেয়ে টাকা জমায়? এটা বিদেশী বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছি, অনেকটা দেখেছি খুব কাছ থেকে। কত কষ্ট করে দুবাই তে 4 থেকে 5 লাখ টাকা খরচ করে আসা হয়, তারা কিনা মাসে ইনকাম করে 20 থেকে 30000 টাকা কেন বাংলাদেশে কি কোন কাজ নাই???
এইসব মানুষেরা তাদের খাবার জন্য দেশ থেকে 200 দিরহাম খরচ করে, 50 থেকে 100 দেরহাম তাদের মোবাইল খরচ দেশে কথা বলার জন্য, আর বাদবাকিটা তারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। চিন্তা করা যায়???
রাস্তায় বসা ওইসব লোকগুলোকে দেখে আমার নিজের কাছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল যে আমি দামি রেস্টুরেন্টে 150দিরহামের খেয়ে আসছি আর তারা হাড়ভাঙ্গা কষ্ট করে 700 থেকে 1000 দিরহাম ইনকাম করে মাসে ‌। আমার যে কি খারাপ লাগছিল তাদের দেখে আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না কষ্টে আমার হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল খুব কান্না পাচ্ছিল, যে এদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই, বাঙ্গালী কোন ধনী লোক এদের পাশে দাড়ায় না, এদের অধিকার নিয়ে কথা বলে না, যত মানুষের সাথে কথা বলি তত মানুষের একই কথা, এরা নাকি খুবই বিরক্ত কর কোন কথাই শোনে না? কিন্তু এরা যদি আমার নিজের ভাই হতো না কথা শুনলে ওতো বুঝানো হতো আমরা? আমি একটা কথা বুঝি যে বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাংলাদেশ এম্বাসির পক্ষে সম্ভব নয় সব সময় ছোট সবকিছু দিকে নজর দেয়া, কারণ এত লোক বৈধ আর অবৈধভাবে আসছে বিদেশে যে তারা তাদের হিসাব জানতে পারে না। তবে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা কিংবা মন্ত্রনালয় বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কতটা কথা বলে সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে? এত রিমিক্স তারা পাঠায় তাদের কষ্টের টাকা গুলো কিন্তু তারা কি কোন ফ্যাসিলিটি পাচ্ছে কি? বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে মিডিলিস্ট প্রবাসীদের যেইভাবে হয়রান করা হয় আর কোন প্যাসেঞ্জারদের তেমন ভাবে হয়রান করা হয় না। এটা আমার নিজের চোখে দেখা এয়ারপোর্টে।
সবার সাথে যেই জিনিসটা বলবো যে আপনার ভাই কিংবা কোনো আত্মীয়কে যখন বিদেশে পাঠাবেন একটু জেনে পাঠাবেন সে কোন কাজটা করছে কিংবা করবে আর তার টাকায় অযথা মস্তি করবেন না। আর এখন দিন শেষ হয়ে গিয়েছে একজনের টাকায় সংসার চালানোর,কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না যদি না দেশের জনগণ তাদের নিজেদের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসে। সেই জনগণ হচ্ছে আমাদের সংসার এর প্রত্যেকটি সদস্য, বিদেশে মাত্র 14 বছর থেকে কাজ করে থাকে স্টুডেন্টরা তাদের নিজেদের টাকা উপার্জনের জন্য, এখানে বাংলাদেশের কোন নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত ঘরের স্টুডেন্টরা কাজই করে না, নারীরা যদি সংসারের কাজের বাইরে উপার্জন না করে তাহলে দেশ কোনদিন উন্নতি হবে না। আর ভুলে জান আমার বউ কাজ করবে না ,এই কথা ছোটলোকরাই বলে থাকে। প্রবাসী ধনী ভাইদের কাছে আমার আবেদন এইসব শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য আদায় আপনারা হতে পারেন জাতির নায়ক। আর বাংলাদেশে বাড়তে পারে আরও বেশি রেমিট্যান্স।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys