1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

কাজ পেতে প্রভাবশালীদের দামি গাড়ি উপহার দিত গোল্ডেন মনির

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০

নিউজ ডেস্ক: ‘অটো কার সিলেকশন’। রাজধানীর প্রগতি সরণিতে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের গাড়ির শোরুম। অবৈধ সব কাজকারবারের বৈধতা দিতে গোল্ডেন মনির এই শোরুমেই নিয়ে আসতেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় বড় কর্তাব্যক্তি আর প্রভাবশালীদের। উপঢৌকন হিসেবে ‘কার সিলেক্ট’ করতে বলতেন! শোরুমের দামি গাড়ির চাবি পেয়ে মনিরের পকেটে ঢুকে যেতেন অনেকেই। প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করার জন্য দামি গাড়িই ছিল তাঁর ‘জাদুর কাঠি’।

র‌্যাবের জালে ধরা পড়ার পর মনিরের বিরুদ্ধে আরো পিলে চমকানো তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমের সহায়তায় রাজউকের বাড্ডা পুনর্বাসন জোনেই শতাধিক প্লট নিজের কবজায় নেন মনির। বারিধারার জে-ব্লক, উত্তরা ও বাড্ডায় পাঁচটি প্লটে গড়েছেন বহুতল ভবন। সাবেক একজন চেয়ারম্যানসহ রাজউক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গেও ছিল মনিরের সখ্য।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের সহায়তায় ২০০ প্লট বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি প্লট বরাদ্দ, নকশা অনুমোদন, নামজারি, বিক্রির অনুমতি, বন্ধক অনুমতিসহ সব ধরনের দাপ্তরিক কাজও করে দিতেন গোল্ডেন মনির। আটো কার সিলেকশনের পাশাপাশি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ মোড়ের ‘জমজম টাওয়ার’ ঘিরেও চলছিল মনিরের কারবার। সহযোগী তিন চোরকারবারির সঙ্গে মিলে ২০ কাঠা প্লটে ২০০ কোটি টাকা দামের ভবনটি গড়ে তোলেন গোল্ডেন মনির। তাঁর অন্যতম সহযোগী ঢাকা উত্তর সিটির ৫৩ নম্বরের কাউন্সিলর ও জমজম টাওয়ারের মালিক মো. শফিকুল ওরফে সোনা শফি ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দরে একটি হত্যা মামলায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের পক্ষের সাক্ষী হন। এর পরই তাঁদের সোনা চোরাচালান কারবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। খোলস পাল্টে ব্যবসায়ী থেকে ভূমিদস্যু বনে যাওয়া মনির সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি টের পান। এক মাস আগে তিনি জমজম টাওয়ারের মালিকানা ৫০ কোটি টাকায় অন্য অংশীদারদের কাছে বিক্রি করে দেন।

উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ‘সাফা টাওয়ার’ নামের আরেকটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছেন মনির। ভবনটির একক মালিক তিনি। হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ থাকা সত্ত্বেও গত বছর আয়কর রিটার্নে তিনি ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। তাঁর ২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪১২ কোটি টাকা আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ৫১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংকে গোল্ডেন মনিরের ১১০ কোটি টাকার ঋণ আছে।

গত শনিবার মনির গ্রেপ্তার হলেও তাঁর অপকর্মের সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, মনিরের সহযোগীদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

এদিকে গতকাল মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় র‌্যাব তিনটি মামলা করেছে। তাঁর বাসা থেকে বিদেশি পিস্তল উদ্ধারের বিষয়ে অস্ত্র আইনে একটি, বিদেশি মদ উদ্ধারের কারণে মাদক আইনে একটি এবং ৬০০ ভরি সোনা ও ডলার-টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়। গতকাল অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসীন মিয়া সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিকের আদালত দুই মামলায় সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে এই রিমান্ড একই সঙ্গে কার্যকর হবে। মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই জানে আলম দুলাল মনিরের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমানের আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

র‌্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সোনা চোরা কারবারে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়ার পর কালো টাকা সাদা করতে প্রগতি সরনিতে ‘অটো কার সিলেকশন’ নামে গাড়ির শোরুম দেন মনির।

সূত্র মতে, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, রাজউকের সাবেক সিবিএ নেতা আব্দুল জলিল আকন্দ এবং তাঁর আত্মীয় রাজউকের নিম্নমান সহকারী মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, রাজউক শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং উচ্চমান সহকারী আবদুল মালেক ছিলেন মনিরের ঘনিষ্ঠজন। দুই-তিন বছর ধরে পূর্বাচল ও বনানী-বারিধারা এলাকায় প্লটের কাজে রাজউকের পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামের কাছে মনির যেতেন বলে সূত্র জানায়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মেট্রো জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসুর সঙ্গেও মনিরের সুসম্পর্ক।

গতকাল এক ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মনিরের বাসায় অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও জমি দখল করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বাড্ডার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৬০০ ভরি সোনার গয়না, বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, ১০ দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ও এক কোটি ৯ লাখ টাকা এবং পাঁচটি অনুমোদনহীন গাড়িসহ গোল্ডেন মনিরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys