1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

ইচ্ছামতো বিল হাঁকায় যে হসপিটাল

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

নিউজ ডেস্ক: একজন রোগীর ৮ দিনে শয্যা ভাড়া ৮২ হাজার ১২০ টাকা। আটজন চিকিৎসকের কনসালটেন্সি ও মেডিক্যাল বোর্ড বাবদ বিল ৫৪ হাজার ১০০ টাকা। রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখার জন্য পৃথক সার্ভিস চার্জ এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ টাকা। অথচ আইসিইউ চার্জ মানেই সেখানে দেওয়া সেবা সেই চার্জে অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। বিস্ময়করই বটে। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, ৮ দিনে রোগীর চিকিৎসায় ৫১টি নিডল (সুই) এবং ১৮৯টি সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়েছে।

এটি একটি হাসপাতালে একজন রোগীর চিকিৎসার বিপরীতে করা বিলের আংশিক তথ্য। ভর্তি হওয়া থেকে রিলিজ পাওয়া পর্যন্ত আট দিনের চিকিৎসাসেবায় ওই রোগীর স্বজনকে গুনতে হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৭ টাকা। বেসরকারি পর্যায়ের এ হাসপাতালের নাম ‘বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল’। ‘বিশেষায়িত’ সেই হাসপাতালে নেই কোনো সিটিজেন চার্টার। এতে বরং কর্তৃপক্ষের সুবিধাই হয়েছে। ইচ্ছামতো বিল হাঁকিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে পারছে মোটা অংকের অর্থ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাসপাতালটির করা বিলে যত ব্যয়ের খাত দেখানো হয়েছে, তা এক ধরনের প্রতারণা। একজন রোগী কেবিন নেওয়ার মানে তার সব সুযোগ সুবিধা সেখানে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এভাবে খাতে খাতে পৃথক বিল নেওয়াটা অনৈতিক। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এ ধরনের বাণিজ্যিক মনোভাব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দৈন্য প্রকাশ করে। তারা বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি এবং সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা না থাকলে এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের অসুস্থতাকে টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থাপিত ২৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতালের বার্ষিক লাইসেন্স ফি দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের মুনাফার ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত আয়করের হার ২৫ শতাংশ। তবে হাসপাতালগুলো নানা খাতে ব্যয় দেখিয়ে স্বল্প পরিমাণ মুনাফা প্রদর্শন করে। এতে তাদের আয়কর সামান্যই দিতে হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। অন্যদিকে সেবা প্রদানকে তারা ইলেক্ট্রন, প্রোটোন, নিউট্রনের মতে ভাগ করে শরীর থেকে রক্ত ওঠানোর মতো রোগীদের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী রোগী ডা. সুপ্রিয় সরকার বলেন, হাসপাতালের বিলে যেসব খাতে টাকা নেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ডা. আবদুল ওয়াহাব খানের অধীনে তিনি ভর্তি ছিলেন। কিন্তু এ চিকিৎসক একবারের জন্য তাকে দেখতে আসেননি। অথচ কনসালটেন্সি ফি নিয়েছেন ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। আইসিইউ শয্যা বাবদ ৭ দিনে ৬৩ হাজার টাকা বিল নেওয়া হয়েছে। আবার সার্ভিস চার্জ বাবদ এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ টাকা। শুধু তাই নয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চার্জ ধরা হয়েছে আলাদা। এমনকি ডিউটি নার্সের ফি পর্যন্ত পৃথক বিল করে নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে মেডিক্যাল শিক্ষায় স্নাতকোত্তর করা এ চিকিৎসক বলেন, সব বিলই যদি পৃথক হয় তা হলে এ হাসপাতালের সেবামূল্য নেওয়া হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালের সিইও ইমরান চৌধুরী বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। বিলের কপি না দেখে বলতে পারবেন না, কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো) ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের বিল না দেখে মন্তব্য করতে পারছি না। তবে সব হাসপাতালে সিটিজেন চার্টার দর্শনীয় স্থানে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা আছে। নিবন্ধন নবায়নের সময় সেটি কঠোরভাবে পরিদর্শনের নির্দেশনা রয়েছে। সিটিজেন চার্টারের নির্দেশিত সেবামূল্যের বাইরে রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় অনৈতিক।

কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি ডা. সুপ্রিয় সরকার। উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে ২ মে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন। অর্থৎ হাসপাতাল ছাড়ার দিন বাদ দিয়ে তিনি ৮ দিন সেখানে অবস্থান করেন। এ আট দিনে তাকে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৭ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। বিলের কপিতে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ৭০০ টাকা। একদিনের কেবিন চার্জ ১৫ হাজার টাকা। ৭ দিনের আইসিইউ বেড চার্জ ৬৩ হাজার টাকা। ইমার্জেন্সি বিল নেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৪৯৫ টাকা। বিলে বলা হয়েছে সাত দিনে রোগীকে ৩১টি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে যার বিল করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৮ টাকা। এ সময় রোগীর শরীরে ৩১ ধরনের ইনজেক্টেবল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে যার বিল এক লাখ ২০ হাজার ১৩৫ টাকা। আটজন চিকিৎসকের কনসালটেন্সি ফি নেওয়া হয়েছে ৪২ হাজার ১০০ টাকা। আবার চারটি মেডিক্যাল বোর্ড বাবদ বিল করা হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আট দিনে রোগীর ল্যাব পরীক্ষা বাবদ বিল করা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ টাকা। সাত দিনে ১২ বার পোর্টেবল এক্সরে দিয়ে রোগীর এক্সরে করা হয়েছে, যার বিল ৭ হাজার ৯২০ টাকা। এ ছাড়া ৫ বার বøাড গ্যাস দেওয়া হয়েছে যার বিল ৭ হাজার ৯৭৫ টাকা। বিলের কপিতে দেখা যায়, প্রসিডিউর চার্জ বাবদ নেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ১৭০ টাকা। এ ছাড়া এক্সরে বাদে রেডিওলজি পরীক্ষার চার্জ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৩৫ টাকা।

দেশের সব হাসপাতালের আইসিইউতে সাধারণভাবে যেসব সেবা প্রদান করা হয় সেগুলোকে পৃথক সার্ভিস হিসেবে দেখিয়ে বিল করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ টাকা। এমনকি আইসিইউ বেডের সঙ্গে মনিটর থাকাই স্বাভাবিক। অথচ সেই মনিটর ফি বাবদ বিল করা হয়েছে ২৬ হাজার ৭২০ টাকা। আইসিইউতে থাকা রোগীর অক্সিজেনও অত্যাবশ্যক, কিন্তু এটারও আলাদা বিল করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা। আইসিইউ নার্সিং চার্জ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ রোগীর কোনো সার্জারি না হলেও সার্জিক্যাল খাতে বিল করা হয়েছে ৩২ হাজার ২১১ টাকা। যেখানে ১০০টি এলকোহল প্যাড, ২০টি গ্লাভস, ২৫টি সুই (একোয়া চেক), ২৬টি সুই (ফ্রিস্টাইল), ২৪টি ইনফিউশন সেটসহ ৫৯ ধরনের আইটেম দেখানো হয়েছে। এসবের মধ্যে আরও আছে, এক এমএল সিরিঞ্জ ৩০টি, ১০ এমএল সিরিঞ্জ ৭০টি, ২০ এমএর সিরিঞ্জ ৯টি, তিন এমএল সিরিঞ্জ ২টি, ৫ এমএল সিরিঞ্জ ৪১টি এবং ৫০ এমএল সিরিঞ্জ ৩৭টি। এ ছাড়া বিলে দেখানো হয়েছে রোগীকে ১৬ ধরনের ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে যার দাম ১৪৫৩ টাকা।

সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো রোগীর কাছ থেকে একবার বেড চার্জ নেওয়া হয়েছে কেবিন বাবদ ১৫ হাজার টাকা, আইসিইউ বাবদ ৬৩ হাজার টাকা। আবার বেড প্যাড বাবদ একবার এক হাজার টাকা, আরেকবার ৭২০ টাকা এবং এয়ার ম্যাট্রেস চার্জ ২৪০০ টাকা।

লেখা: রাশেদ রাব্বি
সূত্র: আমাদের সময়

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys