নিউজ ডেস্ক: বৃহস্পতিবার বিপুলাকার আর্থিক ব্যয় পরিকল্পনা উন্মোচন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ১০ হাজার কোটি ইউরোর (১২ হাজার কোটি ডলার) এ পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্সের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, উদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২১ সালে দেড় লাখেরও বেশি নতুন চাকরি সৃষ্টি করা হবে। খবর এএফপি।
ফ্রান্সে নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তায় এবং উদ্ভূত বেকারত্ব সংকট মোকাবেলায় ব্যয় পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ক্যাসটেক্স বলেন, পরিকল্পনায় অর্থনীতি পুনরায় চালুর পাশাপাশি বেকারত্ব সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে ২০২১ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার চাকরি সৃষ্টি হবে।
মূলত বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে ফ্রান্সের অর্থনীতি। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) পতন হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগে প্রথম প্রান্তিকে পতন হয়েছিল ৫ শতাংশেরও বেশি। এ অবস্থায় ২০২০ সালে জিডিপির পতন ১১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করছে ফরাসি সরকার। একই সঙ্গে বছরটিতে দেশটির আট লাখ মানুষ চাকরি হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বিশালাকার ব্যয় পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে এ পরিকল্পনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭৫ হাজার কোটি ইউরোর চেয়ে আলাদা। একই সঙ্গে আলাদা মহামারীর প্রথম কয়েক মাসে সংকট মোকাবেলায় খরচকৃত অর্থের চেয়েও।
মাঝারি মেয়াদে এ অর্থ দিয়ে সরকার পরিবশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো বেশকিছু অর্থনৈতিক খাতের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে সহায়তা করা হবে। ক্যাসটেক্স বলেন, বর্তমান এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য শুধু ক্ষততে প্রলেপ দেয়া নয়, বরং একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক ভিত তৈরি করা। এর আগে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, এই প্রণোদনা পরিকল্পনা ফ্রান্সকে ২০৩০ সালের জন্য প্রস্তুত করবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতিকে আরো পরিবেশবান্ধব করার পাশাপাশি করপোরেট প্রতিযোগিতা ও চাকরির বাজারের উন্নতি সাধনে গুরুত্ব দেয়া হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় নেয়া কৃপণ পদক্ষেপের বিপরীতে এবারের উদার ব্যয় পরিকল্পনার প্রশংসা করছেন।
অর্থনৈতিক পরামর্শক সংস্থা সিএইর প্রধান ফিলিপ মার্টিনের মতে, ২০০৮ সালের ওই পদক্ষেপ কার্যত বড় ধরনের ভুল ছিল। এ বিষয়ে তার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন ওএফসিইর প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের র্যাগট।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে লকডাউনে যায় ফ্রান্স। প্রথমে ১৫ দিনের জন্য এ লকডাউন জারি করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হয়। লকডাউনের ফলে সারা বিশ্বের মতো বিরূপ প্রভাব পড়ে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর, থমকে যায় প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক ও ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম। এরপর মধ্য মের দিকে লকডাউন তুলে নেয়া হলে ফ্রান্সের অর্থনীতিতে খানিকটা চাঙ্গা ভাব দেয়া যায়। কিন্তু দেশটিতে নতুন করে ফের সংক্রমণ বৃদ্ধি পয়েছে, যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে নীতিনির্ধারকদের। এ অবস্থায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে কর্মস্থলে বাধ্যতামূলক ফেস মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের ঠিক নিশ্চিন্ত করতে পারছে না।
এ অবস্থায় নতুন পরিকল্পনায় অর্থনীতির সরবরাহ ও বিনিয়োগ খাতে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে, যা ২০০৮ সালের পরিকল্পনার একেবারেই বিপরীত। আগামী দুই বছরের এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে করপোরেট খাতের জন্য ৩ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো সমমূল্যের সহায়তা। এছাড়া ৩ হাজার কোটি ইউরো ব্যয় করা হবে পরিবেশবান্ধব নীতি বাস্তবায়নে। তবে বিভিন্ন এনজিও বলছে, পরিবেশবান্ধব নীতি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফলে তারা সরকারি সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকারকে পরিবেশগত প্রতিশ্রুতি গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
তবে নতুন পরিকল্পনায় ভোক্তাব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে ফরাসি সরকার কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। কারণ এরই মধ্যে যে সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে যথেষ্ট চাঙ্গা রেখেছে। এ বিষয়ে ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য মেয়ার নতুন পরিকল্পনার প্রস্তুতিকালে বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাহিদা বা ভোক্তাব্যয় বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে সাত হাজারের বেশি মানুষ। ইউরোপে প্রতিদিন আক্রান্তের হারের দিক দিয়ে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যেও দেশটির কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়গুলো খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকার মানুষকে ফের কাজে যোগ দেয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ফ্রান্সে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩০ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ।