‘রাশিয়া পুনরায় ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ট্রাম্পকে জয়ী করার ফন্দি আঁটছে। এধরনের অপকাণ্ড ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের সোচ্চার থাকতে হবে। আগাম ভোটে অংশ নিতে হবে ব্যাপকভাবে।’ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ান ভোটারদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন ‘সাউথ এশিয়ান্স ফর বাইডেন’-এর প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক।
সোমবার রাতে ভার্জিনিয়াভিত্তিক ‘এনআরবি কানেক্ট টিভি’র টক শোতে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার নীতি-নৈতিকতা পুনরুদ্ধারকল্পে জো বাইডেন-কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করতে হবে। অভিবাসী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠায়ও এর বিকল্প নেই। বর্ণবাদ নির্মূলের যে স্লোগান উঠেছে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বে বসাতে হবে হোয়াইট হাউজ ও কংগ্রেসে।’
‘শুধু তাই নয়, মুসলিম আমেরিকান, আফ্রিকান আমেরিকান, বাদামি রঙয়ের আমেরিকানদের সমঅধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের গ্রীণকার্ড প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন জো বাইডেন-এসব ভোটারের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে’-উল্লেখ করেছেন ওসমান সিদ্দিক।
এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর শেখ রহমান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজ থেকে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বনেতার মর্যাদা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্যে সকলকে ভোটে অংশ নিতে হবে। আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম-এটা শুধু মুখে বললে চলবে না, সকলকে ব্যালট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।’
বাংলাদেশিজ ফর বাইডেন-এর কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর আনিকা রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ানরাও আজ ঐক্যবদ্ধ বাইডেনের বিজয় ত্বরান্বিত করতে। সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করবেন বলে বাইডেন-কমলা হ্যারিসের পক্ষে গড়ে উঠেছে এই জোট।’
আনিকা সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে এবং সম্ভব হলে আগাম ভোট প্রদানের জন্যে। যারা আগাম ভোটে অংশ নিতে পারবেন না তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এ আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, ‘নির্বাচন এলেই অভিবাসীদের জন্যে ডেমোক্র্যাটদের মায়া কান্নার শেষ থাকে না। এর আগে বিল ক্লিন্টন এবং বারাক ওবামার আমলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নেতৃত্ব পেয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা। তবুও তারা সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতার জন্যে কোনো বিল পাশ করেনি। অপরদিকে ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান (রিপাবলিকান), ২০০৮ সালে বিদায়ের আগে জর্জ বুশ (রিপাবলিকান) অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে কিছুটা হলেও একটি নির্দেশ জারি করেছিলেন। তার ফলেও অনেকে বৈধতার সুযোগ পেয়েছেন। সামনের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বিপুল বিজয় পেলেও কী একই আচরণ করবে?’
এমন প্রসঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতি-নির্ধারকের অন্যতম ওসমান সিদ্দিক বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা অনেক কিছুই করেছে। সামনের নির্বাচনে বিজয় পেলে অবশ্যই তারা কঠোর পরিশ্রমী মানুষের কল্যাণে বহুমুখী কর্মসূচির বাস্তবায়ন ঘটাবে। এজন্যেইতো কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট করা হয়েছে।’
বাইডেন জয়ী হলে তিনি তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবেন না বলেও উল্লেখ করেন। স্মরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর ছিল বিল ক্লিন্টনের। প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন ঢাকা সফরের সময় সাথী ছিলেন এই রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক। আরও উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ওসমান সিদ্দিক হচ্ছেন প্রথম মুসলমান রাষ্ট্রদূত
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকির সঞ্চালনা ও উপস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও নেপথ্য ঘটনাবলি আলোকে ‘এনআরবি কানেক্ট’ নিয়মিতভাবে টকশো করছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশিরাও মার্কিন রাজনীতির গতিধারা সম্পর্কে চমৎকার ধারণা পাচ্ছেন বলে অনেকই মনে করছেন।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন