নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানায় বিস্ফোরণে চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা দেখছে না পুলিশ। তবে ঘটনার পেছনের সহযোগীদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট।
পুলিশ জানায়, কোনো গোষ্ঠী অপরাধ ঘটাতে পারে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের সঙ্গে থাকা ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো একটি ভারী ডিভাইসে রক্ষিত বিস্ফোরক থেকেই এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- রফিকুল ইসলাম, শহীদুল ও মোশারফ। ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাদের অব্যাহতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, পল্লবী থানা পুলিশ ও মিরপুরের ডিসির নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছিল কয়েকদিন ধরে। এ অঞ্চলে নানা ধরনের ক্রাইম হয়। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) দিনগত রাত ২টার দিকে কালশী কবরস্থান এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সমবেত হয়ে ক্রাইম করার পরিকল্পনা করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে আরও কয়েকজন ছিল যারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতারদের কাছ থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয় যেটি ডিজিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো।
ওয়েট মেশিনের মতো কোনো জিনিস কেন তাদের কাছে থাকবে, এমন প্রশ্ন ওঠায় রাতেই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে বোম ডিসপোজাল ইউনিট থানায় এসে ওই ডিভাইসটিকে স্ট্যাডি করে। আরও বিশদভাবে ডিভাইসটি খতিয়ে দেখতে কিছু পর্যবেক্ষণ মেশিনসহ আসার জন্য বোম ডিসপোজাল ইউনিটের অন্য সহকর্মীদের খবর দেন তারা।
অন্য সদস্যরা যখন আরো পর্যবেক্ষণ মেশিন নিয়ে আসছিলেন তখন থানার ভেতর থেকে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন সদস্য আহত হন।
এরপর এক্সপার্ট টিম এসে পুরো এলাকা সিকিউরড করেন। প্রাথমিক স্তরে থেকে তারা তারা ধারণা দেয়, ওই ডিভাইসে আরো কিছু বিস্ফোরক অবিস্ফোরিত থাকতে পারে। এরপর ডিভাভাইসে রক্ষিত আরও দু’টি অবিস্ফোরিত এক্সপ্লোসিভ নিষ্ক্রিয় করে থানা ভবন নিরাপদ করা হয়।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আমরা তদন্ত করছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে। এখানে বোম সদৃশ যে জিনিস পাওয়া গেছে, সেটা আসলে বিস্ফোরক।
এসব কোথা থেকে আনা হয়েছিল বা কী উদ্দেশ্য ছিল সেসব নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। কী কাজে এটি ব্যবহার হতে পারে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অব্যাহতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের পেছনে আর কারা সহযোগী ছিল তাদের খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।
এটি কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্ট হামলার পরিকল্পনা অংশ কিনা জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যাদের আমরা গ্রেফতার করেছি তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তারা কোনো না কোনো ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য। তাদের সঙ্গে ওয়েট মেশিন সদৃশ বস্তু যা ছিল সেটার ভেতরেই এই এক্সপ্লোসিভগুলো ছিল।
গ্রেফতাররা এক্সপ্লোসিভগুলো দিয়ে কী করতে চেয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা একটি অপরাধ করার পরিকল্পনা করছিল। সেটা হতে পারে কাউকে খুন করার জন্য, বা কোনো সম্পত্তি দখল সংক্রান্ত বা ডাকাতি করার জন্য। আমরা তদন্তের সন্তোষজনক পর্যায়ে আসলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবো।
নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য বা পুলিশের হাত থেকে রক্ষার জন্য তারা এক্সপ্লোসিভগুলো ব্যবহার করে থাকতে পারেন। অবশ্য বিস্ফোরিত এক্সপ্লোসিভটি দেখে মনে হয়েছে এগুলো খুব বেশি শক্তিশালী ছিল না।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে তার সঙ্গে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো সংযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এটা কোনো রেড অ্যালার্টের অংশ নয়, আমাদের স্থানীয় পুলিশ একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছিল। এরা মূলত মিরপুরের অপরাধী গ্রুপের সদস্য বলেই আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি। আমরা ঈদ উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, যা বলবৎ আছে। ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় না।