নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরের একটি বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ। ওই বাড়ির কবুতরের বাসায় কয়েকটি অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে একটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে নগরের ডবলমুরিং থানা-পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাসাটি নিজাম খান নামের এক ব্যক্তির। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মুক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে দুটি পাইপগান ও একটি এয়ারগান রয়েছে। এই ঘটনায় থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, গতকাল রাতে ডবলমুরিং থানার বংশালপাড়া এলাকায় একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সেই গুলির শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে এই কারখানার সন্ধান পায়। বাসাটিতে মূলত পাইপগান তৈরি করা হতো। নিজাম খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামগুলো নিজাম খানের দোতলা বাড়ির ছাদে একটি কবুতরের বাসায় লুকানো ছিল। ভোট নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে নিজাম খান তাঁর প্রতিবেশী শাহ আলমকে গুলি করেন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শাহ আলম বেঁচে যান। গুলির শব্দে চারদিক থেকে মানুষজন বের হলে নিজাম পালিয়ে যান।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিজামের বাড়ির কবুতরের বাসা থেকে আরও উদ্ধার করা হয়েছে দুটি করে হাতুড়ি, করাত, কাগজের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের নকশা, সাতটি এসএস পাইপ, ১১টি বিভিন্ন আকারের লোহার পাইপ, ১৮টি বিভিন্ন আকারের স্প্রিং, একটি করে ওয়েল্ডিং মেশিন, গ্রেডিং মেশিন, ওয়েল্ডিং হোল্ডার, আর্থিং ক্যাবল, বিদেশি কাটার, রিপিট গান মেশিন, এসএস বক্স পাইপ, স্টিলের তৈরি দুইনলা ব্যারেল, প্লাস্টিকের তৈরি সবুজ রঙের অস্ত্রসদৃশ বস্তু, লোহার ছেনি, কাঠের হাতলযুক্ত বাটাল, স্প্রিং প্লায়ার্স, নোজ প্লাস, স্প্রিং তৈরির প্লায়ার্স, লোহার তৈরি পাইপ রেঞ্জ, ড্রিল মেশিন, স্টিলের গ্রিপ প্লায়ার্স, প্লাস্টিকের বাঁটযুক্ত ছোড়া ও কাটি রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ১২ জানুয়ারি নগরের পাঠানটুলি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় গুলিতে আজগর আলী সরদার নামের একজন নিহত হন। এই ঘটনায় হওয়া মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। সেই ঘটনায় এই কারখানার অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাঠানটুলির গুলিবর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করা গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এদিকে গত বুধবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিদের ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকা প্রকাশ্য অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার করতে পারেনি গুলিতে নিহতের ঘটনায় করা মামলার আসামিদের। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে লালখান বাজার, পাহাড়তলী, উত্তর পাহাড়তলী, পাথরঘাটা ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে কেন্দ্রের বাইরে অবৈধ অস্ত্রধারীরা ঘোরাফেরা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর মধ্যে অনেক অস্ত্রধারীর ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি গলিতে হলুদ রঙের জ্যাকেট পরা এক যুবককে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায় একটি ভিডিওতে। নগরের পাহাড়তলী আমবাগান এলাকার একটি গলিতে কালো কোট পরা এক ব্যক্তি অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি রয়েছে। তাঁকেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া লালখান বাজার ওয়ার্ডে কিরিচ, লোহার রড ও ছুরি নিয়ে একদল যুবক ভোটের দিন ঘোরাফেরা করলেও তাঁদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।