নিউজ ডেস্ক: রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসির কক্ষে ধুমধাম করে একজন বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা-কাম-ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জন্মদিন পালন করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে শহরজুড়ে।
এ ঘটনা নিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের ভেতরেও চলছে তোলপাড়।
গত ৮ ডিসেম্বর রাতে চন্দ্রিমা থানার ওসির কক্ষে ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করেন থানার ওসি গোলাম মোস্তফা।
ওসির কক্ষে তার জন্মদিন পালনের ছবিটি সোমবার নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেন মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাসিকের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম সুমন। সুমনের বাড়ি নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায়।
ফেসবুকে পোস্টের পর পরই ছবিটি সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, আরএমপির চন্দ্রিমা থানাটি ১৯নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ ডিসেম্বর ছিল যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমনের জন্মদিন। এ উপলক্ষে চন্দ্রিমার ওসি লোক পাঠিয়ে বাজার থেকে আনিয়ে নেন একটি বড় কেক। ওইদিন রাতে সুমন তার কয়েকজন সহযোগীসহ চন্দ্রিমা থানায় গেলে ওসি তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন। পরে ওসির কক্ষে কেক কাটা হয়।
ভাইরাল হওয়া দুটি ছবির একটিতে দেখা যায়, ওসির কক্ষে ওসি গোলাম মোস্তফা ও কাউন্সিলর সুমন মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিন পালনের সূচনা করছেন। পরের আরেকটি ছবিতে দেখা যায় কেকের টুকরা খয়েরি রঙের কোর্ট পরিহিত সুমনের মুখে তুলে দিচ্ছেন ওসি।
দুটি ছবিতেই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম ও আরও একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে করতালি দিতে দেখা যাচ্ছে।
এ দিকে নিজের কক্ষে কেক কেটে যুবলীগ নেতার জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে আরএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ওসির এই ধরনের কাজ অসদাচরণের শামিল। বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা তদন্তের পরে জানানো হবে।
এ দিকে যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর সুমন সোমবার জন্মদিনের ছবি দুটি পোস্ট করে নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘চন্দ্রিমা থানার ওসি সাহেব গোলাম মোস্তফা মহোদয়ের স্নেহময় ভালোবাসায়’।
থানায় গিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা ও জন্মদিন উদযাপন প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ওইদিন ওসি সাহেব কীভাবে জানতে পারেন আমার জন্মদিন। তার আমন্ত্রণে থানায় গিয়ে দেখি উনি জন্মদিন পালনের আয়োজন করেছেন। সেখানেই জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
থানায় কারো জন্মদিন পালনের এ আয়োজন প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা থানার ওসি সরকারি মোবাইল নম্বরে ফোন করলে ফোনটি ধরেন পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ওসি স্যার ব্যস্ত আছেন।
তবে ওসির কক্ষে যুবলীগ নেতার জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে শরিফুল ইসলাম বলেন, ওইদিন চন্দ্রিমা থানা কমিউনিটি পুলিশের সভা ছিল। সুমন সাহেব থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি। সেই উপলক্ষে কেককাটা হয়েছে। কেক কেটে কারো জন্মদিন পালন করা হয়নি।
যুবলীগ নেতা সুমনের দেয়া ও ফেসবুকে পোস্ট করা বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এটুকুই জানেন। এর বেশি ওসি সাহেব বলতে পারেন।
তবে যখন ওসি গোলাম মোস্তফা কেকের টুকরা যুবলীগ নেতার মুখে গুঁজে দিচ্ছেন তখন পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুলও করতালি দিচ্ছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ছিলাম কিনা মনে পড়ছে না।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর সুমনের জন্মদিন উপলক্ষে এ দিন ১৯নং ওয়ার্ডের প্রায় ১০টি স্থানে কেককাটা হয়েছে। সুমনের অনুসারীরাই মূলত এ সব অনুষ্ঠানের ঘরোয়া আয়োজন করেন। সুমন সব আয়োজনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ওইদিন ওসির আয়োজনে উপস্থিত হন।
এলাকাবাসী ও মহানগর যুবলীগের একাধিক সূত্র জানায়, বছর খানেক আগে যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমন এলাকার এক কিশোরকে বলাৎকার করেন। এই বলাৎকারের একাধিক ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
খবর: যুগান্তর