বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিসরে আমরা যখন নতুন যুগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, তখন একজন নারী উদ্যোক্তার জীবনযাত্রা আমাদের সামনে যেন একটি জীবন্ত কাব্যের মতো উন্মোচিত হয়। তিনি — সাবিনা ইয়াসমীন, যিনি শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, বরং ব্যবসার পরিভাষায় একজন ন্যারেটিভ আর্কিটেক্ট — স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠান বানানোর দক্ষ এক নির্মাতা।
২৮ বছর ধরে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা তার হাতের মুঠোয়। তিনি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রচিত ইন্টাগ্রেটেড মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড। সেখানে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে—একটানা সফলতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে চলেছেন। একই সাথে তিনি চেয়েছেন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে—সেজন্যই গড়ে তুলেছেন প্রচিত আইটিএস লিমিটেড, প্রচিত হলিডেস, আমুজামু ডটকম, রোদসী পত্রিকা—এবং সাম্প্রতিক সময়ে হোসেইন এগ্রোর মতো উদ্যোগ।
অভিজ্ঞতার এই মহাসড়কে তার যাত্রা শুধুই ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ নয়—এটি মূলত মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ, চিন্তার সাথে দৃষ্টিভঙ্গির সংলাপ, এবং এক ঐক্যবদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস।
ব্যবসার মাঠে একজন নান্দনিক কৌশলী
তিনি নিজেকে বর্ণনা করেন এক ভিজিওনারী লিডার হিসেবে—যাঁর উপস্থাপনা দক্ষতা, কৌশলী আলোচনার ক্ষমতা, এবং নতুন আইডিয়া বাজারে ‘জাত’ করার নৈপুণ্য অসাধারণ। তাঁর দলের শক্তি বহুমাত্রিক—বহু দক্ষতা, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, এবং সহযোগিতার মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ। তাঁর নেতৃত্বে প্রচিত আইএমসি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান ছিল না—এটি হয়ে উঠেছিল নতুন প্রজন্মের মার্কেটিং কৌশলের এক ল্যাবরেটরি।
লেখালেখি তার আত্মার ভাষা। তিনি লিখেছেন তিনটি বই— একগুচ্ছ অনুভূতি, কথার কথা, ভালোবাসা মন্দবাসা—
যেখানে শব্দেরা বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে তার ব্যক্তিত্বের মানবিক সত্তাকে উন্মোচন করে। তিনি ব্যবসায়ীও, সাহিত্যিকও—এই দ্বৈত সত্তাই তাঁকে আলাদা করে তোলে।
এফবিসিসিআই–এর ডিরেক্টর হিসেবে তার স্বপ্ন স্পষ্ট, আর পরিকল্পনা বাস্তবভিত্তিক। শক্তিশালী পলিসি অ্যাডভোকেসি, ব্যবসা শুধু চেম্বারের ভেতর আটকে থাকা নয়—সরকার, বাস্তব চাহিদা, এবং নীতিনির্ধারণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, নিজে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি জানেন—মহিলাদের ব্যবসায়িক উপস্থিতি বাড়ানো মানে শুধু সমতা নয়, বরং অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করা। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সংযোগ বৃদ্ধি, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া—তাঁর নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং বিদেশি নেটওয়ার্ক এফবিসিসিআই–কে নতুন বাণিজ্যিক সেতু তৈরি করতে সাহায্য করবে।
পুরস্কার ও সম্মাননা—তার পথের চিহ্ন
ওমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের অনরারি অ্যাওয়ার্ড, কবি জসিমউদ্দিন পয়ের্টি অ্যাওয়ার্ড, গীতি ললিতকলা একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ট্রাব ওমেন জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড, অন্যপ্রকাশ লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড, এইসব সম্মাননা তার সম্মুখযাত্রার দিকনির্দেশনা নয়—বরং তার কাজের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার নীরব স্বীকৃতি।
ব্যক্তিগত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
ছাদবাগানে তিনি গাছের সাথে কথা বলেন—যেমন তিনি ব্যবসায় মানুষের সাথে কথা বলেন—ধৈর্য আর যত্ন দিয়ে।
তিনি রান্না করেন—ব্যবসাতেও স্বাদ আর পছন্দের সূক্ষ্মতা বোঝেন। তিনি জার্নাল লেখেন—যেন ব্যবসার পথচলা প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় সংগ্রহ করেন। তিনি প্রকৃত ভ্রমণকারী—মানুষকে জানা, সংস্কৃতিকে বোঝা, দিগন্তকে বিস্তৃত করা তাঁর জীবনরীতি।