নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুরে ছুরিকাঘাতে সিয়াম (১৪) নামের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দারুসসালাম থানার লালকুঠির বসুপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিয়াম লালকুঠি বসুপাড়া এলাকার মো. আমিন ও স্বপ্না বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান। সে স্থানীয় লালকুঠি এলাকার কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
ওই ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। গতরাতে থানায় গিয়ে সেই ভিডিও দেখে কাঁদতে থাকেন স্বপ্না বেগম।
সিয়ামের পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী ও দারুসসালাম থানা সূত্রে জানা যায়, কী কারণে সিয়ামের ওপর হামলা হয়েছে, তা এখনো অজানা। হামলার সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মারাত্মক আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় সিয়ামকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের মর্গে রাখা সিয়ামের মরদেহের পেটে এবং নাভির ঠিক চার আঙুল ওপরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ক্ষত রয়েছে। ছুরিকাঘাতে পাকস্থলীতে গভীর ক্ষত হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: মিরপুরে আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিয়ামের বন্ধু সীতল হোসেনের ভাষ্যমতে, ‘গতকাল সন্ধ্যার আগে থেকেই আমি, সিয়াম ও আসিফ আহমেদ আমরা তিন বন্ধুসহ আরও ১৫-৩০ জন একইসঙ্গে ছিলাম। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ায় অদূরের বসুপাড়ার আমাদের পরিচিত একটি গাছ থেকে আম পড়েছে ভেবে তিনজন গাছটির নিচে যাই। কিন্তু গাছের নিচে কোনো আম না পেয়ে আমরা দু-চারটি আম পেড়ে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি। এ সময়ে লাইটের আলোতে আমরা দেখতে পাই, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন যুবক আমাদের দিকে আসছে।’
সীতল হোসেন আরও বলে, ‘লাইটের আলো ছিল বিধায় অস্ত্র হাতে আমাদের দিকে আসা ২০-২৫ জনের গ্রুপের সামনে থাকা রকি, ফরিদ, রুবেল ওরফে পটেটো রুবেল, ইমরান ও জার্মানি মাসুদকে দেখে আতঙ্কে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’
ঘটনায় আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সিয়ামের বন্ধু আসিফ আহমেদের ভাষ্যমতে, ‘পালানোর সময় সিয়াম যে আমাদের সাথে দৌড়ে আসতে না পেরে পেছনেই রয়ে গেছে, সেদিকে খেয়াল করিনি। পরে আমরা জানতে পারি, সিয়ামের পেটে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত করে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে গেছে।’
খবর পেয়ে দারুসসালাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এক যুবক ছুরির মতো দেশীয় একটি অস্ত্র দিয়ে এক কিশোরের ঘাড় শক্ত করে ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় আরও কয়েকজন যুবক তাদের পেছন পেছন যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গতরাতে থানায় যান সিয়ামের মা স্বপ্না বেগম। থানার কম্পিউটার রুমে দারুসসালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জামাল উদ্দিন ও ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এসআই সোহান আহমেদের উপস্থিতিতে ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে স্বপ্না বেগম কাঁদতে থাকেন।
স্বপ্না বেগম বলেন, ঘাড় ধরে জোর করে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া কিশোরই তার আদরের সন্তান সিয়াম। অস্ত্র হাতে তার ঘাড় শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া যুবকের নাম ইমরান (২৩) ও তার পাশের যুবকের নাম আলী (২৫)। তারাই তার সন্তানকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছেন।
হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে থানার কম্পিউটার রুমেই আহাজারি করতে থাকেন স্বপ্না।
এ বিষয়ে দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল বাশার বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ এসেছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।