নিউজ ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রকাশ্য অস্বীকৃতি ত্যাগ করে নমনীয়তা দেখাতে ইউক্রেনকে গোপনে উৎসাহিত করছে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনকে যতদিন পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতা থেকে সরানো যাচ্ছে না অন্তত ততদিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে এই নমনীয় মনোভাব দেখাতে উৎসাহিত করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট শনিবার এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের গোপনে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছে, তারা যেন প্রকাশ্যে রাশিয়ার কাছে এমন ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ‘কখনোই আলোচনায় না বসার’ যে ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তা থেকেও সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কথিত গণভোট শেষে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল- জাপোরিঝিয়া, খেরসন, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার এই ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কিও ঘোষণা দেন, তিনি কখনোই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসবেন না। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাকে নমনীয়তা দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের জোর করে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলছে না। কিন্তু তারা বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো ভয় পাচ্ছে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে, এ বিষয়টির দিকে যেন ইউক্রেন খেয়াল রাখে।
ওই সূত্রটি আরও বলেছে, ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ পরামর্শ থেকে বোঝা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দোটানায় আছে বাইডেন প্রশাসন। একদিকে তারা প্রকাশ্যে ইউক্রেনেক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে চাচ্ছে, আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ যেন দ্রুত বন্ধ হয়। কারণ এই যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বলেছেন, তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এখন আলোচনায় বসতে সিরিয়াস নন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি ইউরোপ, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ যুদ্ধের প্রভাব এসব অঞ্চলগুলোতেই বেশি পড়ছে। এসব অঞ্চলে খাদ্য এবং জ্বালানি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়ে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে মিত্র দেশগুলোও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ওয়াশিংটন পোস্টকে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমাদের কিছু মিত্র দেশের মধ্যে ক্লান্তি চলে আসার বিষয়টি বাস্তব।’
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দপ্তর হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা পরিষদ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা আগেও বলেছি আবারও বলব, কথার চেয়ে কাজ মুখ্য। যদি রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকে, তাহলে তাদেরকে বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে হবে। ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া এই যুদ্ধ বাড়িয়েই চলছে। শুরু থেকেই সিরিয়াস আলোচনার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখিয়েছে তারা।’
এছাড়া শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির দেওয়া একটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। সেদিন জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমরা শান্তির জন্য প্রস্তুত, একটি ন্যায্য এবং যথাযথ শান্তি চাই। যে ফর্মুলার কথা আমরা অনেকবার বলেছি।’
শুক্রবার রাতে দেওয়া সেই বক্তব্যে জেলেনস্কি আরও বলেন ‘বিশ্ব আমাদের অবস্থান জানে। আর তা হল, জাতিসংঘের সনদের প্রতি, আমাদের অখণ্ডতার প্রতি এবং আমাদের জনগণের প্রতি সম্মান।’