কোরবানি শুধু পশু জবাই করার নাম নয়। নিজের পশুত্ব, ক্ষুদ্রতা, নীচুতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহঙ্কার ত্যাগের নাম কোরবানি।
নিজের নামাজ, কোরবানি, জীবন-মরণ ও যাবতীয় বিষয়-আশয় সবকিছুই শুধু আল্লাহর নামে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য চূড়ান্তভাবে নিয়োগ ও ত্যাগের মানসিকতা এবং বাস্তবে সেসব আমল করাই হচ্ছে প্রকৃত কোরবানি।
এই কোরবানি পশু জবাই থেকে আরম্ভ করে নিজের ভেতরকার পশুত্ব জবাই বা বিসর্জন এবং আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে তার পথে শাহাদত বরণ পর্যন্ত সম্প্রসারিত।
কোরবানি হচ্ছে একটি প্রতীকী ব্যাপার। আল্লাহর জন্য বান্দার আত্মত্যাগের একটি উপমামাত্র। কোরবানি থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বছরই আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নিজ সম্পদ অন্যের কল্যাণে ব্যয় করার মনোভাব গড়ে উঠলে বুঝতে হবে কোরবানি স্বার্থক হয়েছে। আর না হয় এটি নামমাত্র একটি ভোগবাদী অনুষ্ঠানই থেকে যাবে চিরকাল।
কোরবানি নিছক কোনো লোক দেখানো বা গোশত খাওয়ার উৎসব নয়। কোরবানিতে যদি আল্লাহভীতি ও মনের একাগ্রতা না থাকে, তাহলে এই সুবর্ণ সুযোগ বিফলে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না।
আমাদের সমাজে আজ অনেককে বড় বড় পশু কিনে প্রদর্শন কিংবা বাহাদুরি জাহির করতে দেখা যায়। আবার অনেককে দেখা যায় গরিব-মিসকিনদের যথাযথভাবে গোশত না দিয়ে ঈদের দিন নিজেরা সামান্য গোশত রান্না করে বাকিটা ফ্রিজে রেখে দেয়।
সারা বছর তারা উল্লাস করে অল্প অল্প করে নিজেরা খায়। এসব কোনোমতেই প্রকৃত কোরবানির পর্যায়ে পড়ে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বড় বড় গরু কিনে প্রদর্শন ও বাহাদুরি জাহির করলে অথবা গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না। তা শুধু পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।
এসব পশুর রক্ত, গোশত যেমন আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, তেমনি গ্রহণযোগ্যতাও পায় না এগুলোর কোরবানি। হালাল উপার্জন, ইখলাস ও একনিষ্ঠতাই হলো কোরবানি কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত।