নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীতে কলেজ অধ্যক্ষকে পেটানোর ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহী-১ আসনের (গোদাগাড়ী-তানোর) এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। ১৩ জুলাই বুধবার যুগান্তর অনলাইনে ও পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে পেটাল এমপি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর রাজশাহীসহ দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল থেকে এমপি ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে পিটুনির শিকার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়েই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, তাকে ঘিরে বার বার চক্রান্ত হয়। আর এর পেছনে থাকেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি যখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তখন সম্পাদক ছিলেন আসাদ।
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আসাদই অধ্যক্ষকে মারধরের অপপ্রচার করেছেন। এতে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। তাঁর মানহানি ঘটেছে। তিনি এর বিচার দেন সাংবাদিকদের কাছেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অধ্যক্ষ নিজেই ফোন করে তাকে জানিয়েছেন যে এমপি ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেছেন। তিনি তার বাড়ি গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। এ বিষয়ে কোনো অপপ্রচার করা হচ্ছে না। যা সত্য তাই বলা হয়েছে। এখন চাপে পড়ে অধ্যক্ষ মার খেয়েও মিথ্যা বলছেন এবং এটাই চিরসত্য। তদন্ত করলেই বিষয়টির সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি ফারুক চৌধুরীর পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যেভাবে বলা হচ্ছে যে এমপি তাকে মারধর করেছেন তা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপি মহোদয় আমাদেরকে নিবৃত করেন। এ ছাড়া আর অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, নির্যাতনের শিকার অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ঘটনার পর আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি এ সময় কান্নাকাটি করে ঘটনার বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন চাপের কারণে এবং জীবন ও চাকরির নিরাপত্তার জন্য এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। তবে আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করছি। শিক্ষক সমিতি অচিরেই এ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এদিকে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের একটি টিম তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী এসে পৌঁছান।
তদন্ত কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল- হোসেন বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে রাজশাহীর শিক্ষক নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। প্রকৃত ঘটনা যেটি ঘটেছে, সেটিই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়েছেন বলে গত বুধবার দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত ৭ জুলাই সন্ধ্যার পর এমপি ওমর ফরুক চৌধুরী তার কার্যালয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে কিল-ঘুসি মারেন এবং হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক পেটান। গোদাগাড়ীর একটি কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেন। অধ্যক্ষ সেলিম এর বিচার করেননি বলে অভিযোগ করেন এমপি ফারুক। এমপি ফারুক ওই আপত্তিকর কথাবার্তার অডিও শুনিয়েই অধ্যক্ষকে পেটাতে থাকেন।