নিউজ ডেস্ক: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কৃষক মোঃ হাবিবুর রহমান বেগুনি (পার্পল লিফ রাইস) ও ফাতেমা এবং ন্যাশনাল ১ ধানের প্রজাতির ধান চারা দিয়ে ফসলের মাঠে এঁকেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রায় পাড়া গ্রামে মো.হাবিবুর রহমান তার নিজের ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি রঙের (পার্পল লিফ রাইস) ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর জাতীয় স্মৃতিসৌধ। আবহমানকাল থেকে সবুজ রঙের ধান গাছ দেখে এসেছে বাংলার কৃষক, কিন্তু সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে ব্যতিক্রমী এ ধান চাষ দেখতে ভিড় করছে মানুষ। প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে ধানের সৌন্দর্য দেখতে আসছেন অনেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় সবুজের মাঠে মাঝখানে বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টুনির কাছে গেলে মনে হয় বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু না, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কান্ডের রং বেগুনি। যেভাবে তৈরি করেছে দেখে নয়ন জুরায়ে যায় বাংলার স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকা। আবার পাশের আরেকটি ক্ষেতে দেখা যায় সবুজ ধান ও বেগুনি ধানের মিশ্রনে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ।
কৃষক মো.হাবিবুর রহমান বলেন, বেগুনি রঙের ‘পার্পল লিফ রাইস’ নামের এ ধান চাষে তিনি আগ্রহী হয়ে এ ধানের বীজ সংগ্রহের অনেক চেষ্টার পর, স্থানীয় এক বীজের দোকানদারের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ধানের ফলন কী রকম হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর দেশের প্রতি ভালবাসা আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে কষ্ট হলেও এঁকেছি জাতীয় পতাকা আর জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ধান দিয়ে পতাকা আর স্মৃতিসৌধ অংকন করায় প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছে আমার ক্ষেতে এসে। অনেক কৃষক এই ধান চাষ করতে বীজ চেয়েছে বলেও জানান তিনি।
চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের এই ধানগাছ দেখে থমকে যায় পথচারীরা। তারা জানার চেষ্টা করে এটি কোন জাতের ধান বা ধানের এমন অবস্থা কী করে হলো? অনেকেই এ সৌন্দর্যের ছবি তুলে। কেউ কেউ তুলে সেলফিও।
পথচারী যুবক বাবুল হোসেন বলেন, ‘এত সুন্দর করে ধানের আবাদ করায় এ কৃষককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরাও এ ধরনের চাষ করব। আমি ছবি তুলে রাখছি। একটি সেলফিও নিলাম।
স্থানীয় শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ.বি.এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ বলেন, ‘দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এ কাজ কোনো ভাবেই করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ধানক্ষেতটি দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
’সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে কৃষক মো.হাবিবুর রহমান বেগুনি (পার্পল লিফ রাইস) জাতের ধান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা লাল বৃত্ত এবং ন্যাশনাল ১ জাতের ধান দিয়ে পতাকার সবুজ অংশ অংকন করেন। পাশের আরও একটি ধান ক্ষেতে এই দুই জাতের ধান দিয়ে একেঁছেন জাতীয় সৃতিসৌধ। তার এই আবাদি জমিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সৃতিসৌধ অংকনে সাভার উপজেলা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান করে আসছে। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। এই ধান ডায়াবেটিস রোগীদের বেশ উপকারী। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে।’