নিউজ ডেস্ক: সন্তানদের স্কুলের ফি দেয়ার জন্য তাঁর কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এই অবস্থায় সৌদি কোনো কোম্পানিতে অথবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি খুঁজছেন যুক্তরাজ্যের একজন কনজারভেটিভ এমপি। গার্ডিয়ান দ্বারা প্রকাশিত একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এমপি ড্যানিয়েল কাউকজিনস্কির কাতর আবেদন সামনে এসেছে। একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কাজ পাওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সংসদে তার সৌদিপন্থী অবস্থান বর্ণনা করেছেন ড্যানিয়েল। জানা গেছে নিজেকে “সৌদিপন্থী” হিসেবে উল্লেখ করে টোরি এমপি একজন ফিক্সারকে তাকে একজন সৌদি নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবার কথা বলেছিলেন।
সৌদি নেতা, মোহাম্মদ বিন সালমান বিষয়টি জানার পর ড্যানিয়েল কাউকজিনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। একটি বার্তায়, কাউকজিনস্কি বলেছেন: “আমি একটি কোম্পানিতে নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বা পরামর্শদাতা হিসাবে একটি চাকরি খুঁজছি। অ্যাংলো-আরব সম্পর্কের প্রতি আমার আবেগ যুক্তরাজ্য বা মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিকে সাহায্য করতে পারে।
কত পারিশ্রমিক পাবো সেবিষয়ে নিশ্চিত করে না বলতে পারলেও আমি যে একজন ভাল পরামর্শদাতা হতে পারবো সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারি।”
পাশাপাশি টোরি এমপি সৌদি আরবের আঞ্চলিক শত্রু কাতারের সাথে সম্পর্কিত একটি সম্মেলনে ভাল বেতনের কাজের জন্য ফিক্সারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বলেছিলেন “প্রতিশ্রুতি দিন যে আপনি আমার জন্যও ভাল পারিশ্রমিকের জন্য চাপ দেবেন… স্কুলের ফি দিতে আমার এটি দরকার!” ড্যানিয়েল পার্লামেন্টে একজন সম্ভাব্য সৌদি নিয়োগকর্তাকে হোস্ট করার ব্যবস্থা করেছিলেন, তাকে হাউস অব কমন্স সফর এবং এমপিদের ব্যক্তিগত ডাইনিং রুমে একটি নৈশভোজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তিনি একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করার জন্য তার সংসদীয় কার্যালয়ে ফিক্সারের সাথে দেখা করার ব্যবস্থাও করেছিলেন। যদিও কথোপকথন থেকে কোনও নতুন কর্মসংস্থান বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মনে হয় না, তবে কাউকজিনস্কি ব্যক্তিগত কাজের জন্য হাউস অব কমন্স ব্যবহার করতে পারেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । এও শোনা যাচ্ছে যে, কাউকজিনস্কি নাকি বলেছিলেন ওয়েস্টমিনস্টারের রাজনীতির প্রতি তাঁর মোহভঙ্গ হয়েছে এবং ব্যাকবেঞ্চ এমপি না হয়ে তিনি এখন রিয়াদে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হতে চান।
কাউকজিনস্কির নির্বাচনী এলাকাটি উত্তর শ্রপশায়ার নির্বাচনী এলাকা সংলগ্ন, এর আগে তাঁকে প্রাইভেট কোম্পানীর জন্য লবিং করতে দেখা গিয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে, কাউকজিনস্কি বারবার ফিক্সারকে বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিতিদের সাথে যোগাযোগ করে একটি ভালো চাকরি দিতে, যাতে বেতনটা তিনি সময়মত পান। ওই ফিক্সার ইতিমধ্যেই সৌদি ব্যবসায়ী ইয়াসির বিন হোমরানের কাছে কাউকজিনস্কির কাজের কথা বলেছেন, ইয়াসির সৌদিতে একটি বিশিষ্ট পরিবার থেকে এসেছেন এবং তাঁর কাছে যথেষ্ট অর্থ আছে বলেও জানা গেছে।
বিন হোমরান যখন লন্ডনে ছিলেন, তখন কাউকজিনস্কি স্বল্প নোটিশে নিজেকে উপলব্ধ করেছিলেন এবং হাউস অব কমন্সে এমপিদের ব্যক্তিগত ডাইনিং রুমে তার সাথে ডিনারের জন্য একটি টেবিল বুক করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি সৌদি ব্যবসায়ীকে সংসদ সফরে নিয়ে যাবেন। নিজেকে বার বার সৌদিপন্থী বলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন এমপি কাউকজিনস্কি। সেই সময়ে কাতার ব্যবসায়ী খালিদ আল-হেইলের হয়ে কাজ করছিলেন ওই ফিক্সার। লন্ডনে ওই ব্যবসায়ীকে নিয়ে একটি সম্মেলন আয়োজন করার জন্য কাউকজিনস্কি নাকি ১৫ হাজার পাউন্ড চেয়েছিলেন। এসবটাই নাকি তিনি করেছিলেন স্কুলের ফি দেয়ার জন্য।
যদিও কাউকজিনস্কি ফিক্সার বা তাদের সৌদি পরিচিতিদের কাছ থেকে বেশি বেতনের কাজ পেতে সফল হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। যাইহোক, এমপি-র দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি এখনো ভালো বেতনের কাজ খুঁজে যাচ্ছেন কাউকজিনস্কি। দেখা যাক তিনি শেষ পর্যন্ত সফল হন কিনা।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান