নিউজ ডেস্ক: পটুয়াখালীর বাউফলে সালিসে ডেকে নিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করে কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গতকাল সোমবার তাকে বরখাস্ত করা হয়।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় শাহিন হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না, তা পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে জবাব পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টায় মো. আল ইমরান নামের এক ব্যক্তি পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেনের দ্বিতীয় আদালতে ৬ নম্বর কনকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইমরান ওই কিশোরীর প্রেমিক রমজান হাওলাদারের বড় ভাই। রমজানকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও বিষ খাইয়ে হত্যাচেষ্টা করেছেন মর্মে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি। আদালত তার মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আগে চেয়ারম্যানকে তালাক দেয় ওই কিশোরী। অ্যাডভোকেট মো. আল আমিন বলেন, কিশোরীকে সালিসে ডেকে নিজে বিয়ে করায় চেয়ারম্যান শাহিন তালাকনামা সৃষ্টি করতে বাধ্য হয়। মূলত ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ায় তিনি তালাকে বাধ্য হন। মামলায় চেয়ারম্যান শাহিন ও তার পাঁচ সহযোগী এবং নিকাহ রেজিস্টার ও কাজী মাওলানা মো. আইয়ুবকে আসামি করা হয়েছে। আদালতে ওই কিশোরীর (১৪) জন্ম সনদ ও রমজান হাওলাদারের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রথম স্ত্রী আছেন। সেই সংসারে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার ছেলে বিবাহিত।
এদিকে, চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে গেছে ওই কিশোরী। ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে কিশোরীকে বিয়ে করেছিলেন চেয়ারম্যান শাহিন। গত শনিবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে তার স্ত্রীর তালাক সম্পন্ন হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কিশোরীর বাবা।
প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের কথা বলে ওই কিশোরীকে চেয়ারম্যান নিজেই বিয়ে করায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় ইউনিয়নজুড়ে। এ ছাড়া ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়। যে কারণে তালাকের সিদ্ধান্ত হয়। যে কাজীর মাধ্যমে বিয়ে হয়েছিল, গত শনিবার তার মাধ্যমেই চেয়ারম্যান শাহিন ও ওই কিশোরীর তালাক সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, ওই কিশোরী তাকে স্বামী হিসেবে মেনে না নেওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে মেয়েটিকে তার বাবার সঙ্গে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেছিলেন, মেয়েটিকে দেখে তার পছন্দ হওয়ায় তাকে বিয়ে করেছিলেন। এ ছাড়া তার বিয়ে প্রয়োজন ছিল। বিয়ের বিষয়টি নিয়ে তিনি লজ্জিত নন বরং আনন্দিত।