প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ গোপনাঙ্গের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কিছুটা অবহেলা প্রদর্শন করে থাকেন। ফলে এসব অঙ্গে, বিশেষ করে বগল, কুঁচকি, নাভি ও যৌনাঙ্গে দাদ, চুলকানি, ফুসকুড়ি, দুর্গন্ধের মতো সমস্যা বাড়ছে।
করণীয়:
* বগলের যত্ন:
শরীরের অন্য যেকোনো অংশের চেয়ে এ অঙ্গতে ঘাম হয় বেশি। এ থেকে অ্যালার্জি, ফুসকুড়ি তো বটেই বিরক্তিকর চুলকানির সমস্যাও দেখা যায়। ঘাম জমে জমে এই জায়গায় ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়। যার ফলে দুর্গন্ধ এবং চুলকানি হয়। তাই গরমের সময়টা এই জায়গা শুকনো রাখতে হবে। বগল প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। গোসলের পর পাউডার দেয়াও যায়।
এতে ঘাম কম হয়। তবে সবচেয়ে প্রয়োজন, পরিষ্কার টাওয়েল দিয়ে মুছে মুছে ত্বকের এ অংশ শুকনো করে তোলা।
* নাভি:
নাভি শরীরের অন্যতম একটি সেনসেটিভ অংশ। এখানে দুর্গন্ধও অপেক্ষাকৃত বেশি। নাভি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত পরিচ্ছন্নতার কথা উঠে আসবেই। আমাদের শরীরে ঘাম হয় এবং শরীরের রেসিডেন্সিয়াল ব্যাকটেরিয়াগুলো ঘামকে এক ধরনের ক্ষতিকর পদার্থে পরিণত করে, যা ত্বকে দুর্গন্ধসহ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া নাভিতে সৃষ্ট মরা কোষ নাভির গভীরে গিয়ে জমা হয়, যার জন্য দুর্গন্ধ বেরোয়। তাই গোসলের সময়ে নাভিকে বিশেষভাবে পরিষ্কার রাখুন। নাভির নিচে কোনো সিস্ট হলেও দুর্গন্ধ বেরোতে পারে। বিশেষ করে সিস্টে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে সেখান থেকে তরল বেরোয় যা থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। ফাংগাল বা ইস্ট ইনফেকশন হলে নাভি থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে পারে। পরিষ্কার করার পরেও যদি নাভির দুর্গন্ধ না যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। অনেকেই নাভিতে পিয়ার্সিং করেন। এর থেকে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধার সম্ভাবনা থাকে।
যৌনাঙ্গ:
পুরুষ ও নারী উভয়ের যৌনাঙ্গ প্রায়ই সেতসেতে থাকে। এখানে ত্বকের ভাঁজগুলো ও শরীরের অন্য যেকোনো অংশ থেকে বেশি। এ ছাড়া এ অঙ্গগুলোর ত্বকে বিশেষ ধরনের গ্রন্থি থাকে, যা থেকে এক ধরনের রস নিঃসৃত হয়। যৌনাঙ্গের বিশেষ ধরনের গন্ধের জন্য গ্রন্থিগুলি দায়ী। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শরীরের অন্য অংশের চেয়ে যৌনাঙ্গেই বেশি হয়ে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের ক্যানডিডিয়াসিস সংক্রমণ একটি অতি সাধারণ রোগ। প্রতিদিন ভালোভাবে এ অঙ্গ পরিষ্কার করার কোনো বিকল্প নেই। কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া অনেকের যৌনাঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট শক্ত গুটি দেখা দেয়, এগুলোকে ভাইরাল ওয়ার্ট বলা হয়। হিউম্যান প্যাপিলোমা নামে এক ধরনের ভাইরাসের কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না গেলে এ থেকে ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
কুঁচকি:
ফাঙ্গাস ইনফেকশন শরীরের এ অংশেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মূলত কুঁচকিতে ত্বকের ভাঁজ অনেক গভীর হয়, শরীরের ওজন যত বেশি হয় ততই এই ভাঁজ এর গভীরতা বাড়তে থাকে। গোসলের সময় অবশ্যই এ অংশটুকু ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যাদের ঘনঘন ফাঙ্গাস ইনফেকশন হয়, তারা প্রয়োজনে অ্যান্টিফাঙ্গালযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারেন। মোদ্দাকথা, ত্বকের যত্নে এইসব সেনসেটিভ অংশের যত্নের কোনো বিকল্প নেই। ত্বকরোগের একটি বড় সংখ্যাই শরীরের এসব সেনসেটিভ অংশে হয়ে থাকে। তাই একটু সচেতন থাকলেই ত্বকের অনেকগুলো বিব্রতকর রোগ দেখে বেঁচে থাকা সম্ভব।