নিউজ ডেস্ক: কাগজপত্রের জটিলতায় ১৮ বছর ধরে ফ্রান্সের প্যারিসের বিমানবন্দরে বসবাস করা ইরানের সেই মেহরান করিমি নাসেরি মারা গেছেন।
কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে থাকা নাসেরি স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে শার্লস দ্য গল বিমানবন্দরের টু-এফ টার্মিনালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের মসজিদে সোলেমান এলাকায় জন্ম নাসেরির। নিজের জিনিসপত্রের ট্রলি দিয়ে ঘেরা বেঞ্চে নাসেরি তার জীবন সম্পর্কে লিখে এবং বই ও সংবাদপত্র পড়ে দিন কাটাতেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে নাসেরির এই করুণ কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৯৯৯ সালে শরণার্থীর মর্যাদা পেলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই ছিলেন নাসেরি।
কিভাবে আটকে গেলেন নাসেরি?
ইরানের শেষ রাজা শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ১৯৭৭ সালে ইরান থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পালিয়ে বেলজিয়ামে গেলে সেখানে রাজনৈতিক শরণার্থী মর্যাদা পান তিনি।
১৯৮৮ সালের নভেম্বরে মাকে খুঁজে বের করার প্রয়াসে ব্রিটেন, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস ভ্রমণ করেছিলেন। কিন্তু অভিবাসনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কোথাও আশ্রয় মেলে না। পরে ফ্রান্সে আসেন। সেখানে আটক করা হয় তাকে।
তারপর তাকে টার্মিনাল টু-এফ বিল্ডিংয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, যেখানে তিনি বিমানবন্দরের কর্মচারীদের খাবার এবং ওষুধের ওপর নির্ভর করে নিজের স্যুটকেসটা নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
১৯৯২ সালে একটি ফরাসি আদালত রায় দেন যে, তাকে বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কার করা যাবে না, কিন্তু দেশেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম উভয়েই নাসেরিকে বসবাসের প্রস্তাব দেয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
বিবিসি জানায়, ১৯৮৮ সালে প্যারিসের এই বিমানবন্দরে বসবাস শুরু করেন নাসেরি। নিজেকে স্যার আলফ্রেড নামে পরিচয় দিতেন। বিমানবন্দরের লাল সোফায় বসে লিখতেন নিজের আত্মজীবনী। তার ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ নামের সেই আত্মজীবনী ২০০৪ সালে বই হিসাবে প্রকাশ করেন ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্র– ডনকিন।
বই অবলম্বনে সে বছরই ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা তৈরি করেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। ওই বছরই মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে নাসেরির চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস। ছিলেন অভিনেত্রী ক্যাথেরিন জেটা জোন্সও। ঘটনাবহুল নাসেরির জীবনের পুরো চিত্রই ওঠে এসেছে সিনেমায়।