1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

যুগে যুগে ইউরোপকে ঋণী করেছে আফ্রিকা

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

নিউজ ডেস্ক: চলতি সপ্তাহে উদযাপিত হচ্ছে স্পেন, পর্তুগাল ও দক্ষিণ ফ্রান্সে মুসলিম শাসনের অবসানের বার্ষিকী। আফ্রিকার মুসলিম সাত শ বছর এই অঞ্চল শাসন করেছিল। আজ থেকে ৪০৮ বছর আগে এই দিনে (১০ জুন) স্পেনের রাজা তৃতীয় ফিলিপ একটি নির্দেশনা জারি করেন, যা নিকটতম ইতিহাসে জাতিগত নির্মূলের অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। রাজা তৃতীয় ফিলিপ তিন লাখ মুর মুসলিমকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।

 

এই নির্দেশ স্পেনের ইতিহাসের নৃশংস ও দুঃখজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। যুগে যুগে ইউরোপকে ঋণী করেছে আফ্রিকা : শুধু আধুনিক কালেই আফ্রিকানরা (মুসলিম) ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করেনি, বরং প্রাচীন কালেও ইউরোপে সভ্যতার আলো দান করেছিল তারা। খ্রিস্টপূর্ব ১৭ শ অব্দে ইউরোপের গ্রিক দ্বীপে সভ্যতার আলো জ্বলেছিল। কিন্তু তারা সেই আলো লাভ করেছিল নিল নদের অববাহিকায় বসবাসরত কালো আফ্রিকানদের থেকে। গ্রিকদের কাছ থেকে সভ্যতার আলো লাভ করেছিল রোমানরা। কিন্তু একসময় তারা তা হারিয়ে ফেলে এবং শুরু হয় পাঁচ শ বছরের অন্ধকার যুগ। এই অন্ধকার যুগের অবসান হয়েছিল অপর একদল আফ্রিকানের মাধ্যমে, যারা মুর মুসলিম নামে ইতিহাসে পরিচিত।

মধ্যযুগেও অন্ধকারে ছিল না আফ্রিকা : পশ্চিমা বিশ্বের ইতিহাস পড়ানোর সময় মধ্যযুগকে সাধারণভাবে অন্ধকার যুগ বলা হয়। যে সময় শিল্প-বিজ্ঞানসহ সভ্যতার সাধারণ ধারাগুলো কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল। এটা অবশ্য ইউরোপের জন্য সত্য, কিন্তু আফ্রিকার জন্য সত্য নয়। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক চেখ আন্তা ডিয়োপ ব্যাখ্যা করেছেন মধ্যযুগে কিভাবে আফ্রিকান সাম্রাজ্যগুলো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছিল এবং বিশ্বের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো আফ্রিকানদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। সে সময় ইউরোপীয়রাই ছিল অনাচারী বর্বর।

মুসলিমরাই সভ্য করেছিল ইউরোপকে : রোমান সভ্যতার পতনের পর যুদ্ধরত শ্বেতাঙ্গ উপজাতিকে ককেশাস অঞ্চল থেকে পশ্চিম ইউরোপের দিকে ঠেলে দিয়েছিল আক্রমণকারী হুনরা। মুর মুসলিমরা ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানিশ উপকূলে আক্রমণ করেছিল। আফ্রিকান মুসলিমরাই আক্ষরিক অর্থে ককেশাস থেকে পশ্চিম ইউরোপে আসা অসভ্য শেতাঙ্গদের সভ্য করেছিল। মুররা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত স্পেন, পর্তুগাল, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ ফ্রান্স শাসন করেছিল। যদিও স্পেনের পরবর্তী প্রজন্মের শাসকরা ইতিহাস থেকে এই যুগকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিককালের প্রত্নতাত্ত্বিক নিরীক্ষা ও গবেষণায় বের হয়ে এসেছে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শিল্প ও দর্শনে মুরদের অবদান ইউরোপকে অন্ধকার যুগ থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছিল এবং তাকে রেনেসাঁর পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করেছিল। বিখ্যাত ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ বাসিল ডেভিডসন উল্লেখ করেছেন, ‘অষ্টম খ্রিস্টাব্দে স্পেনে বিকশিত সমৃদ্ধ আফ্রিকান সভ্যতার থেকে বসবাসের জন্য স্বস্তিদায়ক ও প্রতিবেশীদের দ্বারা প্রশংসিত কোনো ভূমি ছিল না। ’ নিঃসন্দেহে মুররা কালো ছিল এবং ১৬ শতাব্দীর ইংরেজ নাট্যকার ইউলিয়াম শেকসপিয়ার আফ্রিকানদের প্রতিশব্দ হিসেবে মুর শব্দের ব্যবহার করেছেন।

ইউরোপ ও স্পেনের তুলনা : মুসলিম স্পেনে শিক্ষা ছিল সর্বজনীন। বিপরীতে সে সময় খ্রিস্টান ইউরোপের ৯৯ শতাংশ জনগণ ছিল নিরক্ষর। এমনকি কোনো কোনো রাজাও লিখতে জানতেন না। প্রাক-আধুনিক যুগে মুররা তাদের উচ্চশিক্ষার হার নিয়ে গর্ব করত। যখন ইউরোপে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তখন মুরদের ছিল সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। মুসলিম স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থার (ইউনেসকো) অভিমত হলো, বর্তমান বিশ্বের সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হলো মরক্কোর আল-কারউইন বিশ্ববিদ্যালয়, যা মুর সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফাতেমা আল-ফিহরি নামক একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মাধ্যমে।

বিজ্ঞানে যেভাবে বিপ্লব এসেছিল : গণিতের ক্ষেত্রে শূন্য, আরবি সংখ্যাগুলো এবং দশমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে মুসলিমরাই ইউরোপকে পরিচিত করেছিল, যার সাহায্যে তারা গণিতের সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সমাধান করতে এবং নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। এভাবেই ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ভিত রচিত হয়েছিল। মুরদের বৈজ্ঞানিক কৌতূহল আকাশে উড্ডয়ন প্রচেষ্টা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। ইবনে ফিরনাস বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আকাশে ওড়ার বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা শুরু করেন। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো বলে, ইবনে ফিরনাসের উদ্যোগ সফল ছিল, কিন্তু তাঁর অবতরণ পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটি ছিল। ইতালির লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একটি ‘হ্যাং গ্লাইডারে’র নকশা করার ছয় শ বছর আগে আফ্রিকান মুসলিমরা আকাশে উড়েছিল।

স্পষ্টত, মুররা সাধারণ ইউরোপীয়দের অন্ধকার যুগ থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছিল এবং রেনেসাঁ যুগের পথ প্রশস্ত করেছিল। আধুনিক যুগের ইউরোপ যেসব বিষয় নিয়ে গর্ব করে তাদের অনেক কিছুই তারা মুসলিম স্পেন থেকে লাভ করেছিল। বিশেষত মুক্ত বাণিজ্য, কূটনীতি, মুক্ত সীমান্ত, শিষ্টাচার, উন্নত সমুদ্রযাত্রা, গবেষণা পদ্ধতি ও রসায়নের মৌলিক উন্নতি।

সামাজিক জীবনে পার্থক্য : যখন মুররা ছয় শর বেশি পাবলিক গোসলখানা তৈরি করেছিল এবং এর শাসকরা জমকালো প্রাসাদে বসবাস করত, তখন জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের রাজা জনসাধারণকে বোঝাত পরিচ্ছন্নতা পাপ এবং ইউরোপীয় রাজারা বড় শস্য গুদামে বসবাস করত। যেখানে না ছিল কোনো জানালা, না ছিল কোনো চিমনি। ছাদে শুধু একটি ছিদ্র রাখা হতো ধোঁয়া বের হওয়ার জন্য।

দশম খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভা শুধু মুসলিম স্পেনের রাজধানী ছিল না, বরং এটা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক শহর। সে সময় কর্ডোভায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস করত। এই শহরের ছিল সড়ক বাতি, ৫০টি হাসপাতাল, পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, পাঁচ শ মসজিদ ও ৭০টি পাঠাগার। যার একটি পাঠাগারে ছিল পাঁচ লক্ষাধিক বই। মুসলিম স্পেন যখন সামাজিক জীবনে এসব অগ্রগতি অর্জন করেছে, তখন লন্ডন ছিল ২০ হাজার মূর্খ মানুষের বসতি। যারা ছয় শ বছর আগে অর্জিত রোমানদের প্রযুক্তিগত উন্নতিগুলো প্রায় ভুলে গিয়েছিল। লন্ডন ও প্যারিসে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সড়ক বাতি ও পাকা রাস্তা দেখা যায়নি। তখন ক্যাথলিক চার্চ অর্থ ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল, যা অর্থনৈতিক উন্নতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। মধ্যযুগের ইউরোপ ছিল এমন এক দুর্ভাগ্যজনক জায়গা, যা কুৎসা, বর্বরতা, অশিক্ষা ও রহস্যবাদে পরিপূর্ণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys