নিউজ ডেস্ক: মুদ্রাস্ফীতি হলো সময়ের সাথে সাথে কোনো কিছুর দাম বৃদ্ধি। ধরুন, এক বোতল দুধের দাম এক পাউন্ড ছিলো, কিন্তু এক বছর পরে সেই দুধের বোতলের দাম হলো ১.০৫ পাউন্ড। তাহলে বার্ষিক দুধের মূল্যস্ফীতি ৫%।
কীভাবে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার পরিমাপ করা হয়?
মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যান পরিমাপ করতে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস একটি পণ্যের ঝুড়ি থেকে দৈনন্দিন জিনিসের দামের হিসাব রাখে। পণ্যের সংখ্যা ক্রমাগত বদলায়, কারণ নতুন নতুন জিনিস ঝুড়িতে যোগ করা হয়। প্রতি মাসের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান দেখায় যে, গত বছরের একই তারিখ থেকে এই দামগুলি কতটা বেড়েছে। আপনি বিভিন্ন উপায়ে মুদ্রাস্ফীতি গণনা করতে পারেন, তবে মূল পরিমাপ হলো কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই বা CPI )। CPI-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানুয়ারিতে ছিল ১০.১%, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১০.৫% থেকে কমেছে।
কেন দাম এত দ্রুত বাড়ছে?
শক্তির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি একটি মূল কারণ। কোভিডের পরে জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় তেল ও গ্যাসের চাহিদা ছিল বেশি। একই সময়ে ইউক্রেনের যুদ্ধ মানে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি কমেছে। এর জেরে আরো দাম বেড়েছে ।
যুদ্ধের ফলে পাওয়া শস্যের পরিমাণও কমে গেছে, ফলস্বরূপ খাদ্যের দাম বেড়েছে। ওএনএস জানিয়েছে, জানুয়ারিতে বার্ষিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৬.৭% পৌঁছে গিয়েছিল। দুধ, জলপাই তেল, পনির এবং ডিমের মতো মৌলিক জিনিসগুলির দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি চিনি, জ্যাম, মধু, সিরাপ, চকোলেট , নরম পানীয় এবং জুসের দামও বেড়েছে।
মজুরির সাথে কি মুদ্রাস্ফীতির সামঞ্জস্য আছে ?
অনেক মানুষের বেতন ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে তাদের দ্রুততম হারে মজুরি বৃদ্ধি সত্ত্বেও মজুরির সাথে মুদ্রাস্ফীতির ফারাক থেকে যাচ্ছে । সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, গড় মজুরি – (বোনাস ব্যতীত) ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ৬.৭% বেড়েছে। কিন্তু একবার মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে গড় বেতন আসলে বাজারদরের তুলনায় কম । বেসরকারী খাতে ( (৭.৩%)) কর্মরত ব্যক্তিদের মজুরি বৃদ্ধির সাথে সরকারি খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের মজুরির মধ্যেও একটি বড় ব্যবধান ছিল (৪.২%)। শ্রমিক ইউনিয়নগুলি বলছে, মজুরি জীবনযাত্রার ব্যয়কে প্রতিফলিত করে। তাই অনেক শ্রমিক বেতনের জন্য ধর্মঘট করছে। যদিও সরকারের যুক্তি, বড় বেতন বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে কারণ কোম্পানিগুলি এর ফলে দাম বাড়াতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় কী করা যেতে পারে?
ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি ২% রাখার লক্ষ্য রয়েছে, তবে বর্তমান হার এখনও পাঁচ গুণেরও বেশি। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সামলাতে ব্যাংক সুদের হার বাড়ায়। এর ফলে ঋণগ্রহণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এর অর্থ বন্ধকী কারবারের সাথে জড়িত কিছু লোককে তাদের মাসিক অর্থপ্রদানের পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে। সঞ্চয়ের ওপর সুদও বৃদ্ধি পায় এর জেরে । যখন মানুষের কাছে খরচ করার জন্য কম টাকা থাকে, তখন তারা কম জিনিস কেনে। পণ্যের চাহিদা হ্রাস পায় এবং দামের বৃদ্ধি কমে । ফেব্রুয়ারিতে, ব্যাংক টানা দশমবার সুদের হার বাড়িয়েছে, মূল হারকে ৪% নিয়ে গেছে। পরবর্তী সুদের হার ঘোষণা হবে ২৩ মার্চ। সুদের হার আবার বাড়তে পারে। কিন্তু যখন মূল্যস্ফীতি বিশ্বব্যাপী শক্তির দামবৃদ্ধির জেরে হয়, তখন ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের পদক্ষেপ এটিকে ধীর করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি কবে কমবে?
নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি মানে দাম কমে যাওয়া নয়। এর মানে মুদ্রাস্ফীতির দ্রুত বৃদ্ধিকে আটকানো । ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড মনে করে যে, মূল্যস্ফীতি গত বছর শীর্ষে ছিল, তারা আশা করে- এটি ২০২৩ সালে ধীর হতে থাকবে, বছরের শেষ নাগাদ এটি প্রায় ৪%- এ নেমে আসবে। অফিস অফ বাজেট রেসপন্সিবিলিটি (OBR), যা সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলি মূল্যায়ন করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ৩.৭৫%-এ নেমে আসবে। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি অর্ধেক করা সরকারের পাঁচটি মূল প্রতিশ্রুতির মধ্যে একটি। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, তিনি এটি অর্জনের জন্য নতুন নীতি ঘোষণা করবেন, নাকি কেবল পূর্ববর্তী নীতির ওপর নির্ভর করছেন।
অন্যান্য দেশে কী ঘটছে?
অন্যান্য দেশগুলিতেও যুক্তরাজ্যের মতো জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে । অনেকগুলি কারণ একই- বর্ধিত শক্তি খরচ, পণ্য ও উপকরণের ঘাটতি এবং কোভিড। যেসব দেশ ইউরো ব্যবহার করে তাদের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার জানুয়ারিতে ৮.৫% ছিল বলে অনুমান করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমলেও এখনও তা বেশ উচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ১২ মাসে দাম ৬.৪% বেড়েছে – ডিসেম্বরে যা ছিলো ৬.৫. %।
সূত্র : বিবিসি