নিউজ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে প্রত্যেকের নিজস্ব বাসস্থান থাকবে। তাঁর জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সেই বাংলাদেশে তাঁরই কন্যা সবার জন্য স্থায়ী বাড়ি নিশ্চিত করার উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
চলমান মুজিব বর্ষে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রায় ৮ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী দরিদ্র পরিবারের প্রত্যেককে একটি করে স্থায়ী বাড়ি দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ষাটোর্ধ সরদার সারেন এক টুকরো সরকারী জমিতে অস্থায়ী কুঁড়েঘরে তার জীবনের ৬৫ বছর অতিবাহত করেছেন। বর্তমান বাংলাদেশের এই বদ্বীপ ভূমিতে অন্যতম প্রাচীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এই প্রবীণ সদস্য গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কান্দিয়া ইউনিয়নের মরাবস্তাপুকুর এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “আমি আমার জন্মের পর থেকে এখানে এই পাড়ায় বাস করছি। আমার এখানে নিজের কোন জমি নেই। ছয় সদস্যের পরিবারে দিনমজুরের কাজ করে আমার পক্ষে নিজের জমি কেনার সামর্থ ছিল না।” স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ার সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন সারেন আবেগাশ্রুতভাবে বিগত দিনগুলো স্মরণ করেন, যখন দুই বিধবা কন্যা এবং এক নাতির সাথে ছয়জনের পরিবার ঝুপড়ি ঘরে ঢুকেছিল যা বৃষ্টি ও ঝড়ের কারনে বেশ কয়েকবার ক্ষতি হয়েছে। সারেন আবেগাশ্রুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নতুন আধাপাকা টিনের ঘরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পেছন ফিরে কুঁড়েঘরের দিকে তাকাচ্ছিলেন।
দুই রুমের বাসায় একটি রান্নাঘর, এক টয়লেট ও একটি বারান্দার বাড়িটি ও দুই শতাংশ জমির ওপর এখন তার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি গত ২৩ জানুয়ারি “মুজিব বর্ষ” উপলক্ষে সরদার ও সহযোগীসহ ৬৯ হাজার ৯০৪ টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ করে জমির মালিকানা সংক্রান্ত নথি হস্তান্তর করেন। কর্মকর্তারা বলেন, দেশের দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে ভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের ৪ হাজার ৫০০ পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের জন্য বাড়ি দেয়া হয়েছে।
দেশজুড়ে সমতল ভূমিতে বসবাসকারী জাতিগত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে বাসস্থান সরবরাহের কাজ চলছে।সরদারের মতো সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মোট ৫০টি পরিবার মরাবস্তাপুকুর এলাকায় একইভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতিগত গ্রুপের ৭০ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব (পিএমও) তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, “মুজিব বর্ষ” উপলক্ষে শেখ হাসিনা দেশব্যাপী সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে মোট ৩ হাজার ৫০০ বাড়ি উপহার দিয়েছেন। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের বাইসাইকেল ও বৃত্তি দিয়েছেন যাতে তারা সহজে শিক্ষা সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাড়াও পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী ভূমিহীন ও গৃহহীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারকে নিজস্ব বাড়ি ও একই সুবিধাদি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠর মধ্যে ইতোমধ্যেই মোট ৪ হাজার ৫০০ বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে।”
খবর: বাসস