নিউজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় এক প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। স্থানীয় সময় বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দেশটির কেদাহ রাজ্যের জিত্রা জেলার মুকিম তাঞ্জাংয়ের তাম্বাক রোডের পাশের একটি ডোবা থেকে ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম আবদুল খালেক (৩২)। তিনি স্থানীয় একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে ফোরম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ ব্যাপারে কেদাহ রাজ্যের কুবাং পাসু জেলার পুলিশ সুপার রদজি আবু হাসান জানিয়েছেন, গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জরুরি একটি কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও কেদাহ রাজ্যের কন্টিনজেন্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আইপিকের ফরেনসিক ইউনিটের একটি দল। মরদেহটির পেছনে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং মাথায় বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ছিল। ছুরিকাঘাতের কারণে ফুসফুসে ক্ষত রয়েছে। এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
উদ্ধারের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে তাকে মেরে ফেলে দেয়া হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের প্যান্টের পকেট থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) একটি কার্ড উদ্ধার করা হয়। মরদেহটির কাছে যেহেতু ইউএনএইচসিআর-এর কার্ড পাওয়া গেছে, সে হিসেবে নিহত ব্যক্তি রোহিঙ্গা কিনা তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
তবে নিহতের ছোট ভাই আবদুল মালেক বাপ্পি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, তারা রোহিঙ্গা নন। তারা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার মুমিনুল হকের চাচাত ভাই।
আব্দুল মালেক জানান, কক্সবাজার জেলা সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের ঘোনার পাড়া গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের নুরুল আলম ও রোকসানা বেগমের সন্তান তারা। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আবদুল খালেক সবার বড়। তার ভাই ২০০৮ সালে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় আসেন এবং দেড় বছর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেখানে এক বছর জেল হয়। এরপর স্থানীয় পুলিশ থেকে বাঁচার জন্য তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) একটি কার্ড সংগ্রহ করেন। সেটি দিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় কাজকর্ম করা অবস্থায় গত মঙ্গলবার নিখোঁজ হয়। বুধবার তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ছোট ভাই দাবি করছেন, তার ভাইয়ের সহকর্মীরাই তাকে হত্যা করেছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা। নিহত খালেকের সহকর্মী কয়েক রোহিঙ্গা নাগরিক মিলে কোম্পানির ৪৭ হাজার রিঙ্গিত আত্মসাৎ করে। সেই ঘটনার কথা খালেক মালিকপক্ষকে জানিয়ে দিলে এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে দলের মূলহোতা আরাফাত এবং তার কয়েকজন সহকর্মী মিলে খালেককে হত্যা করে।
নিহত আবদুল খালেকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বড় ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এ মুহূর্তে খালেকের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট না থাকায় তার মরদেহ দেশে পাঠানো যাচ্ছে না। খালেকের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিতে সরকার ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করছে তার পরিবার।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে ক্রিকেটার মুমিনুল বললেন, ‘উনি আমার কাজিন হন। আসল কারণটা (হত্যাকান্ডের)… আমি যতটুকু বাবার কাছে শুনেছিলাম, উনি ওই জায়গায় সাত-আট বছর ধরে থাকেন। শহর থেকে অনেক দূরে থাকতেন তিনি। সেখানে উনার সঙ্গে রোহিঙ্গাও দুই-তিনজন থাকত। সেই রোহিঙ্গারা মনে হয়, কোনো একটা অসাধু কাজ করেছিল।
তিনি বলেন, আমার কাজিনকে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তাকে রোহিঙ্গাদের সেই অসাধু কাজের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন আমার সেই চাচাত ভাই। ইনফর্ম করার কারণে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তার রেষারেষি হয়। পরের দিন ঘুমের সময় তাকে জবাই করে হত্যা করেন সেই রোহিঙ্গারা।’
এদিকে খালেকের নিয়োগকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দূতাবাস যদি সহযোগিতা করে তাহলেই কেবল খালেকের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে খালেকের নিয়োগকর্তা বাদী হয়ে থানায় রোহিঙ্গা আরাফাত ও তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।