নিউজ ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশের অনন্য শালীন ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপকার তথা আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আমীর আহম্মদ চৌধুরী রতন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৭ বছর বয়সী আমীর আহম্মদ চৌধুরী রতন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ইদগাহ মাঠে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরহুমের লাশ নিয়ে যাওয়া হবে তার পৈতিক নিবাস ফেনী জেলায়। সেখানে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
আমীর আহম্মদ চৌধুরী রতনকে ময়মনসিংহবাসী চেনে “রতন দা” কিংবা “রতন স্যার” নামেই। মানুষ গড়ার কারিগন হিসেবে যিনি এ শহরে সর্বমহলে শ্রদ্ধার পাত্র।
দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস করানো, বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খবর নেয়া, সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক, স্কুলের পরিবেশ তদারকি ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত সময় কাটানো, পেশাগত জীবনে প্রবীণতার ছাপ পড়লেও এখনো নবীনদের মতোই উদ্যমী আর প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন রতন স্যার।
আমীর আহম্মদ চৌধুরী রতন ১৯৮৩’র অক্টোবর থেকে দীর্ঘ সময় ময়মনসিংহের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই স্কুলেই রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফলেই মুকুল নিকেতন আজ দেশসেরা বিদ্যালয়গুলোর একটি। ১৯৮৪ সালে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান। বর্তমানে মুকুল নিকেতন স্কুলে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
আমীর আহম্মদ চৌধুরী রতনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ নভেম্বর। তার বেড়ে উঠা, পড়াশুনা ময়মনসিংহ শহরেই। শিশুকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার ঠিকানা ময়মনসিংহ শহরের মহারাজা রোড। তার বাবা মরহুম সুলতান আহম্মদ চৌধুরী, মা মরহুমা আজিজেরন্নেছা চৌধুরীনী, স্ত্রী মাহমুদা খান ইভানা ও এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার বড় ভাই সদ্য প্রয়াত আজিজ আহম্মেদ চৌধুরী ছিলেন ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এবং তার অপর ভাই ছিলেন মরহুম বীর বিক্রম মেজর জেনারেল (অব.) আমীন আহম্মেদ চৌধুরী।
১৯৫৬ সালে তিনি সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬০ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মেধা তালিকায় নবম স্থান নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন এক্সটেনশন এন্ড রিসার্চ (নায়েম), ঢাকা শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ১৯৯১ সনে প্রসিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৬৪ সালের আগষ্ট মাসে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অধ্যাপনার মাধ্যমে শুরু হয় তার শিক্ষকতা জীবন। গৌরীপুর কলেজে তিনি ছিলেন ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৩’র সেপ্টেম্বর থেকে তিনি যোগ দেন মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে।
শিক্ষতকতার বাইরেও রতন স্যারের রাজনৈতিক, খেলাধূলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে সক্রিয় পদচারণ। তার উদ্যোগেই ১৯৫৯ সালে এ শহরে ময়মনসিংহ জেলা মুকুল ফৌজ প্রতিষ্ঠা হয়।
তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭০-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর চট্রগ্রামের উপকূলে তিনি মুকুল ফৌজের ৪৭ জন কর্মী নিয়ে ত্রাণ কাজে অংশ নেন। এরপর ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮-এ বন্যার সময় মুকুল ফৌজ এবং মুকুল নিকেতনের ছাত্রদের নিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় তার কার্যক্রম এখনো মানুষ স্মরণ করে। এ স্কুলে আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত, ক্রিকেট, ফুটবল, স্বাউটিং, গার্ল হাইড ইত্যাদি বিষয়ে নিয়িমিত প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সকল বিষয়ে দেখভাল করতেন রতন স্যার।